স্টাফ রিপোর্টার: বেশ কিছু দিন থেকেই ব্যয়বহুল হচ্ছে বিদেশি ঋণ; এরমধ্যে এক বছরে এবার দ্বিতীয় দফায় সুদহার বাড়াতে চায় বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলক সস্তা ঋণের দেশ জাপান। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যমান ১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ঋণের সুদহার আরও কিছুটা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
আগামী অক্টোবর থেকে নতুন হারে সুদ সমন্বয় করে ২ দশমিক ২৬ করতে চায় সংস্থাটি, যা নিয়ে কিছুটা কমিয়ে রাখতে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকারও।
জুলাই মাসের শেষ দিকে নতুন প্রস্তাব পাওয়ার পর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ নিয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে; চেষ্টা করছে যাতে জাপানি ঋণের সুদহার ২ শতাংশের নিচে থাকে, বলছেন কর্মকর্তারা।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব একেএম শাহাবুদ্দিন বলেন, আগামী নভেম্বরের দিকে জাইকার ৪৪তম ঋণ প্যাকেজের চুক্তি হতে পারে। ওই প্যাকেজের ঋণের সুদ নিয়ে ইআরডি ও জাইকার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যেই নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হতে পারে।
জাপানের বর্ধিত নতুন সুদহার শুধু বাংলাদেশ নয়; একই সময়ে অন্যান্য দেশে অর্থায়ন করা দেশটির ঋণের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য হবে। দেশটি যখন সুদহার বাড়ায় বা কমায় তখন তা সবখানে একসঙ্গে করে থাকে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।
স্বল্পোন্নত ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাপানের কাছ থেকে বাংলাদেশ মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হারে ঋণ পেত। মাথাপিছু আয় বেড়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় তা পর্যায়ক্রমে বেড়ে সবশেষ গত এপ্রিলে ১ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের মাঝে সুদহার কমিয়েও ছিল দেশটি।
এর আগে ০.৭০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে জাইকার ঋণের সুদহার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ করা হয়, যা গত এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা। ২০২২ সালে এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
নতুন সুদহার নভেম্বরে সই হতে যাওয়া ৪৪তম ঋণ প্যাকেজের আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলোতে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন ইআরডি কর্মকর্তারা।
চলমান প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের পাশাপাশি বর্তমান ডলার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জাপানের কাছ থেকে ৪৪তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাজেট সহায়তা চেয়েছে। সরকারের চাহিদায় সাড়া দিয়ে জাইকা ৩১ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির একজন কর্মকর্তা।
ঋণের সুদহার বাড়াতে জাপানের প্রস্তাব প্রসঙ্গে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব একেএম শাহাবুদ্দিন বলেন, জাপান যতগুলো দেশে ঋণ দেয় সব দেশেই একসঙ্গে এ প্রস্তাব পাঠায়। পরে আলোচনা করে পরিস্থিতি বিবেচনায় সুদহার বাড়ানো বা কমানো হয়। তবে বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশসহ সব দেশের জন্য দেওয়া ঋণের সুদহার বছরে দুইবার সমন্বয় করে দেশটি।
ইআরডির সংশ্লিষ্ট উইংয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, কোভিড মহামারী পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিশ্বজুড়ে
সুদহার বাড়ানোর প্রভাব উন্নয়ন সহযোগী ও অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর ঋণের সুদেও প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিতে এখন ইউরোপীয় আন্ত:ব্যাংক সুদহার ইউরোবর এবং সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) যুক্ত করে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। আগে যা নেওয়া হত লন্ডন আন্ত:ব্যাংক সুদহার লাইবর অনুযায়ী। বর্তমানে এসব আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের গড় সুদহার ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। এতে অনেকগুলো প্রকল্পের সুদহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
ইআরডির এই কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে সুদের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়ছে জাইকার ক্ষেত্রেও। তবে ইআরডি চেষ্টা করছে তা যতটা কমিয়ে রাখা যায়।
এমন অবস্থায় আগামী নভেম্বরের পর জাইকার ৪৪তম ঋণ প্যাকেজের চুক্তি সই হতে পারে। সেই প্যাকেজের ঋণের সুদ নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী হতে পারে। ওই প্যাকেজের আওতায় তিনটি প্রকল্প প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেছে জাইকা। দেশটির সরকারের সম্মতি পেলে তা চূড়ান্ত করবে সংস্থাটি। পাশাপাশি জাইকা ৩১ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রকল্প তিনটি হচ্ছে- জাপানি অর্থায়নে চলমান মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, চট্টগ্রাম সুয়ারেজ সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এবং হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এক্সটেনশন প্রকল্প।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিবেচনায় বাংলাদেশের একক বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ দেশটি ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে।
বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংক ০.৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২.২০ শতাংশ, এডিবি ১ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ, আইডিবি ২ থেকে প্রায় ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে আসছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।