স্টাফ রিপোর্টার: এম কে ফুটওয়্যার লিমিটেড ঋণের পাহাড় নিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসার অনুমোদন পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা।
শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে এক লাফে ১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের এমকে ফুটওয়্যার ৩৭ টাকা ৮৫ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। বাজারে আসার আগে দ্রুত এ উন্নতিকে অস্বাভাবিক মনে করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আইপিও অনুমোদনের আগে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার কথা জানিয়েছিলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারবাজারে আসাকে কেন্দ্র করে এমকে ফুটওয়্যাররের পরিশোধিত মূলধন দ্রুত বাড়ানো হয়েছে। এতে রয়েছে বিতর্কিত শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারে রুপান্তর। সম্প্রতি একটি কোম্পানির শেয়ার মানি ডিপোজিট নিয়ে বিতর্ক উঠে। যার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনও রয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেয়ার মানি ডিপোজিট বাবদ কোন অর্থ কোম্পানিতে জমা দেওয়া হয়নি বলে বিএসইসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। যে কারণে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।
সে রকম শেয়ার মানি ডিপোজিটও এমকে ফুটওয়্যারের কিউআইওতে আসার আগে ছিল। যেগুলোকে আইপিওতে আবেদনের আগে শেয়ারে রুপান্তর করা হয়েছে। যেমনটি করা হয়েছিল ওই বিতর্কিত কোম্পানির ক্ষেত্রে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিক্রির টাকা বা অন্য কোনো কারণে কোম্পানিতে আসা অর্থকে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে দেখানো হয়েছিল। যার প্রকৃত ঘটনা এখন বেরিয়ে এসেছে।
এমকে ফুটওয়্যারের খসড়া প্রসপেক্টাসের ৫৭ পৃষ্টা অনুযায়ি, ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রায় পুরোটাই বা ৯৭.৩৬ শতাংশ ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল। যার প্রায় পুরোটাই শেয়ার মানি ডিপোজিট থেকে ইস্যু করা হয়েছে।
এমকে ফুটওয়্যার আকারে ছোট হলেও ঋণের পাহাড়ে অবস্থান করছে। যে কোম্পানির ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে (স্বল্প মেয়াদি ও কারেন্ট ম্যাচুউরিটি) ৬৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। চলতি দায়ের থেকে কোম্পানিটির চলতি সম্পত্তির পরিমাণও কম।
৩৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এমকে ফুটওয়্যারের সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে মোট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকায়। যা পরিশোধিত মূলধনের ৩.৬৬ গুণ এবং ইক্যুইটি বা নিট সম্পদের ২.৮৩ গুণ। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি মাত্রাতিরিক্ত ঋণের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এমন ঋণের পাহাড়ে অনেক কোম্পানিকেই দেউলিয়া হওয়ার মতো ঘটনা দেশে রয়েছে। এমনকি সম্প্রতি ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আমান ফিডের কারখান নিলামে তোলার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
কয়েক বছর ধরে শেয়ারবাজারে আইপিওতে আসার আগেই হঠাৎ করে পরিশোধিত মূলধন কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সমালোচনার মধ্যে রয়েছে। যে বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্নও রয়েছে। যেটার সত্যতা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।