স্টাফ রিপোর্টার: আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) ২০১৯ সালে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছিল। তিন বছরের মধ্যে এ অর্থ ব্যয় করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বন্ডের ৩৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ অর্থ অব্যবহৃত রয়েছে। জ্বালানির বিল পরিশোধ করা হয়ে গেলেই বন্ডের পুরো অর্থ ব্যবহার সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।
বন্ডের অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুসারে, গত মার্চ শেষে ৬১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৫ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অব্যবহৃত রয়েছে ৩৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৫ টাকা, যা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের ৩৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন ও পূর্তকাজের জন্য ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল।
গত মার্চ শেষে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি ৯৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৩ টাকা বা ৮৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ অর্থ। প্রাথমিক জ্বালানি কেনায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ খাতে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। যানবাহন ক্রয়ে বরাদ্দ থাকা ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার মধ্যে ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ২২৪ টাকা বা ৬৩ দশমিক ১৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকৌশল ও পরামর্শক সেবার জন্য ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে ৪ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ২৫০ টাকা বা ৯৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে।
চলতি মূলধন বাবদ বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার পুরোটাই ব্যয় হয়েছে। আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকার মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ২ কোটি ৫৯ লাখ ৯১ হাজার ৮২৮ টাকা বা ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আইপিওর বাইরে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আরো ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, মূলত জ্বালানির বিল বাকি থাকার কারণে এখনো আইপিওর অর্থ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আমাদের নতুন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানির জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিপিডিবির সঙ্গে আমাদের এখনো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষর না হওয়ার কারণে আমরা সে বিল পরিশোধ করতে পারছি না এবং একই সঙ্গে আমাদের ১৮ মাসের বিলও বকেয়া রয়েছে।
চুক্তির বিষয়টি বিপিডিবির পর্ষদে পাস হয়ে গেছে। এখন এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেয়ে গেলে আশা করছি এ মাসের শেষের দিকে পিপিএ স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে এবং তার পরেই আমরা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে জ্বালানির বিল পরিশোধ করে দেব। এছাড়া সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে আইপিওর টাকা থেকে যানবাহন কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি। এ বাবদ যে অর্থ সাশ্রয় হবে সেটি চলতি মূলধন হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করা হবে।
২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এপিএসসিএলের নন-কনভার্টিবল অ্যান্ড ফুললি রিডিমেবল কুপন বিয়ারিং বন্ডটি। প্রতিটি ৫ হাজার টাকা ইস্যু মূল্যের ২ লাখ টাকার বন্ড আইপিওর মাধ্যমে ইস্যু করে এপিএসসিএল।
১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে ৪ শতাংশ মার্জিন যোগ করে এপিএসসিএল বন্ডের বার্ষিক কুপন সুদহার নির্ধারিত হবে। এর পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ও সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। এ কুপন অর্ধবার্ষিক মেয়াদে প্রদেয়। আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫ হাজার টাকায় কোম্পানিটির একটি বন্ড বরাদ্দ ছিল। আইপিওতে আসার পর প্রথম তিন বছর বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে মার্জিনযুক্ত হারে লভ্যাংশ পাবেন।
আর চতুর্থ বছর লভ্যাংশের পাশাপাশি বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেয়া শুরু হবে। এর মধ্যে চতুর্থ বছরে ২৫ শতাংশ, পঞ্চম বছরে ২৫, ষষ্ঠ বছরে ২৫ ও সপ্তম বছরে ২৫ শতাংশ অর্থ ফেরত দেয়া হবে। আর সপ্তম বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের পাওনা পুরোপুরি পরিশোধের পর বন্ডটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। বন্ডটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত অন্যান্য সিকিউরিটিজের মতোই লেনদেনযোগ্য।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।