স্টাফ রিপোর্টার: অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আগামী ৫ বছর হবে বাংলাদেশের জন্য সোনালী সময় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় কক্সবাজারের ইনানিতে অবস্থিত সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড হোটেলে কনফারেন্স অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। কনফারেন্স অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং মো. আবদুল হালিম।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারে ‘ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে বিএসইসি, ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ(সিএসই), এসোসিয়েশন অব এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজস অ্যান্ড মিউচ্যুয়ার ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) এবং ভ্যানচার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুয়েটি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি)-এর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএসই এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি কনফারেন্সে অংশ নেয়া সকলকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে বিকশিত করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নয়নে সকল অংশীজনের সঙ্গে একসাথে কাজ করার কথা বলেন। দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে ডিএসই কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
কনফারেন্স অনুষ্ঠানে ‘Current State and Future Direction of Mutual Funds & Collective Investment Schemes in Bangladesh’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসি’র কমিশনার ড. মিজানুর রহমান।
তিনি তথ্যবহুল উপস্থাপনায় বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের সঙ্গে দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দেশে এই খাতকে আরো বর্ধিত করা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। দেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের সম্প্রসারণের জন্য আগামীতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিধিবিধান ও নীতি সংশ্লিষ্ট পুনর্গঠন প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, এই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএসইসি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে। তার বিশ্লেষণী ও তথ্যবহুল প্রেজেন্টেশন উপস্থিত সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে সকলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কনফারেন্স অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এএএমসিএমএফ-এর প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম। তিনি অন্যান্যের মধ্যে বলেন, বিশ্বে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩০০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিরা একইসঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী এবং পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বৃহৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি সকলকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর উত্তরণে কাজ করার অনুরোধ জানান। কনফারেন্স অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসইসি’র কমিশনার মো. আবদুল হালিম।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অর্থনীতির তুলনায় দেশের পুঁজিবাজার এখনও অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। আমরা দেশের পুঁজিবাজারকে উন্নত ও স্মার্ট পুঁজিবাজারে পরিণত করতে কাজ করছি। তিনি অংশীজনদের সকলকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এই খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা বলেন। অর্থনৈতিক সকল সূচকে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হবে। তিনি উপস্থিত সকল অংশীজনদের পরামর্শ ও মতামত দেয়ার অনুরোধ করেন এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরো এগিয়ে নিতে কাজ করার আহ্বান জানান।
কনফারেন্স অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে এখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম অর্জন প্রয়োজন এবং এ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার বলে জানান।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে আরো বিকশিত করতে এ খাত সম্পর্কে সকলকে আরো জানানো প্রয়োজন এবং প্রচার প্রয়োজন বলে জানান। তিনি আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অধিক রিটার্ন দেয়ার সুযোগ-সম্ভবনাকে কাজে লাগনো উচিত বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে বিকশিত করতে দেশের পুঁজিবাজারের ইক্যুইটি মার্কেটেরও উন্নয়ন প্রয়োজন এবং তার জন্য দেশের পুঁজিবাজারের ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তি প্রয়োজন। তিনি ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেষ্ট হতে অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে এই খাতের উন্নয়ন সাধনের অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছে। পুঁজিবাজারকে দেশের অর্থনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময়ে বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফা লাভ করতে না পারলেও যেন কোনভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন না হোন তার জন্য বিএসইসি কাজ করছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের শিল্পায়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার হচ্ছে যা অদূঢ় ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আগামী ৫ বছর হবে বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত ভালো করছে এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে এই খাতের উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি বলে জানান তিনি। সামনের দিনগুলোতেও বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারা ধরে রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কনফারেন্স অনুষ্ঠানে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় ‘Technology for Transparency & Liquidity of Mutual Funds & Other Collective Investment Schemes’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনা আলোচক হিসেবে অংশ নেন Association of Asset Management Companies and Mutual Funds (AAMCMF) এর প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম, Venture Capital & Private Equity Association of Bangladesh (VCPEAB) এর চেয়ারম্যান মো শামীম আহসান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ(ডিএসই) এর Chief Regulatory Officer (CRO) আবু তাহের মোহাম্মদ খায়রুল বাশার এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম ফারুক।
প্যানেল আলোচনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং অন্যান্য কালেকটিভ বিনিয়োগ স্কীম এর তারল্য এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচকবৃন্দ আগামীতে দেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড খাতের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি আরোও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর কনফারেন্স অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়াংশে বিএসইসি’র পরিচালক মো. মাহমুদুল হক ‘Regulatory Oversight of Asset Managers, Trustee and Custodians’ শীর্ষক উপস্থাপনা প্রদান করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়াংশে ‘Accounting, Auditing and Reporting of Collective Investment Scheme’ বিষয়ে হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোং এর সাব্বির আহমেদ এবং ‘Market Development for Exchange Traded Funds(ETF)’ বিষয়ে সাদাত মান্নান প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।
কনফারেন্স অনুষ্ঠানের শেষাংশে বিএসইসি’র কমিশনার ড. মিজানুর রহমান এর সঞ্চালনায় একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
কনফারেন্স অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি ‘ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনফারেন্স অনুষ্ঠানে আগত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ব্যাপ্তি আরো বাড়বে এবং দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।