সকল মেনু

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করল সরকার

স্টাফ রিপোর্টার: গত অর্থবছর সরকার ব্যাংক খাত থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল। যার অধিকাংশই নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ঋণ শোধ করেছে। এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এতে ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানান, দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। এর কারণে অনেক ব্যাংক তাদের চাহিদা মেটাতে অন্যদের কাছ থেকে ধার করছে চলছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও বড় অঙ্কের ধার দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায় করতে পারছে না। একইসঙ্গে আমানতের পরিমাণও আগের তুলনায় কমছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতেও ব্যাপক পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে চলতি বছরের জুন শেষে সেই ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর ২৫ সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আর জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সুদ ব্যয় কমাতে নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমেছে। এই চাপ সামাল দিতে ব্যাংকের উপর নির্ভরতা বেড়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছর ব্যাংক খাত থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির উপর বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমানো পরামর্শ দিয়েছেন। আর সেই পরামর্শের আলোকেই কমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে সরকারের ঋণ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে ব্যাংক, ডাকঘর ও সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে গ্রাহকরা বিভিন্ন স্কিমে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। একই সময়ে মূল সঞ্চয়পত্রের অর্থ ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ফলে জুলাই শেষে এ খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই মাসের তুলনায় খাতটিতে বিক্রি বেড়েছে।

যদিও এই খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছিল সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি স্তর করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এর পর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে থাকে। সরকার এ খাতে সুদ ব্যয় কমাতে এমন কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। আগের অর্থবছরে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top