সকল মেনু

চালু হবে ‘শর্টসেল’, কীভাবে কাজ করবে

সিনিয়র রিপোর্টার: শেয়ারবাজারে আসছে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ নামে পরিচিত নতুন পণ্য। এরই মধ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি ইটিএফ বা তহবিলের নিবন্ধন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফ নামে নিবন্ধিত এ তহবিল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বাজারে আনতে যাচ্ছে লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। গত মঙ্গলবার এ তহবিলের নিবন্ধন দেয় বিএসইসি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে এ তহবিলের হাত ধরেই বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শর্টসেল’ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। শর্টসেল হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে শেয়ার বা তহবিলের ইউনিটের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ পদ্ধতির আওতায় হাতে শেয়ার বা ইউনিট না থাকার পরও বাজারে বিক্রয়াদেশ দেওয়া যায়। তবে সেটি করতে পারবে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান।

কীভাবে কাজ করবে শর্টসেল

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, নিবন্ধিত ইটিএফটির লেনদেন শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারে। এটির প্রকৃত সম্পদমূল্য বা এনএভি ১০ টাকা। সেই হিসাবে এটির ইউনিটের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১ টাকা বাড়তে পারবে। একইভাবে দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১ টাকা কমতেও পারবে। এখন ধরা যাক, লেনদেনের শুরুতেই এর প্রতিটি ইউনিটের দাম ১০ শতাংশ বেড়ে ১১ টাকা হয়ে গেছে।

তাহলে তহবিলটির অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের হাতে তহবিলটির ইউনিট না থাকার পরও বাজারে এ ইউনিট বিক্রি করতে পারবে শর্টসেলের আওতায়। দিন শেষে শর্টসেলের মাধ্যমে এসব ব্রোকারেজ যত ইউনিট বিক্রি করবে, লেনদেন শেষে তার সমপরিমাণ নতুন ইউনিট ইস্যু করবে সম্পদ ব্যবস্থাপক। ইটিএফের ক্ষেত্রে শর্টসেলের এই ব্যবস্থাকে ইউনিট ক্রিয়েশনও বা নতুন ইউনিট সৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ, তাৎক্ষণিক শর্টসেলের বিপরীতে নতুন ইউনিট ইস্যু করবে সম্পদ ব্যবস্থাপক।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউনিট সৃষ্টি ও অবলুপ্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় এ ধরনের তহবিলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের ঝুঁকি কম থাকে। একইভাবে এতে অস্বাভাবিক মুনাফার সম্ভাবনাও কম। কারণ, ইটিএফের বাজারমূল্য ওই তহবিলের এনএভির কাছাকাছিই থাকবে। তাই বাজারে এ ধরনের তহবিল যত বাড়বে, ততই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শর্টসেল ব্যবস্থাটি প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখন পর্যন্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে শর্টসেলের আনুষ্ঠানিক প্রয়োগ নেই। শুধু ইটিএফের ক্ষেত্রে এই সুবিধা রাখা হচ্ছে।

দেশের শেয়ারবাজারে ইটিএফ হিসেবে পরিচিত নতুন ধরনের এ পণ্য বাজারে আনতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের একটি দল। এ দলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইটিএফও একধরনের মিউচুয়াল ফান্ড। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত মিউচুয়াল ফান্ডের চেয়ে এটির বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো সাধারণত বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয় না।

কিন্তু ইটিএফ বেমেয়াদি হলেও এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও লেনদেন হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের অর্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে এই তহবিলের বড় অংশই বিনিয়োগ করা হবে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে। এ তহবিলের সম্পদ ব্যবস্থাপক চাইলে তহবিলের পুরো অর্থই সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে।

প্রচলিত ধারার মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রচলিত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে তাদের তহবিলের একটি বড় অংশ অর্থবাজারের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রচলিত ধারার মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বেশির ভাগেরই বাজারমূল্য এনএভির চেয়ে অনেক কম। কোনো কোনোটির বাজারমূল্য এনএভির অর্ধেকের কম।

জানতে চাইলে দেশে প্রথমবারের মতো নিবন্ধন পাওয়া ইটিএফের সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়মন ইবনে মুজিব বলেন, আমরা এ বছরের মধ্যেই ইটিএফটিকে বাজারে আনার চেষ্টা করছি। এ ধরনের তহবিল বাজারে এলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ঝুঁকি কমবে।

জানা গেছে, এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইটিএফের ১০০ কোটি টাকার মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে ১০ কোটি টাকা দেবে লঙ্কাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট। ২ কোটি টাকা দেবে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। আর বাকি ৮৮ কোটি টাকা প্লেসমেন্ট ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top