সকল মেনু

আরএন স্পিনিং-সামিন ফুড একীভূত, ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ ডিবিএর বিস্ময়

সিনিয়র রিপোর্টার: বস্ত্র খাতের কোম্পানি আরএন স্পিনিং মিলস একীভূত হয়েছে সামিন ফুডের সঙ্গে। সামিন ফুডের সব সম্পদ ও দায় আরএন স্পিনিং মিলসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ দুই কোম্পানির বিদ্যমান সব ইকুইটি শেয়ার বাতিল করা হয়েছে।

হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, আরএন স্পিনিং মিলসকে সামিন ফুডের শেয়ারধারীদের কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৩১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৪টি শেয়ারের বিপরীতে নিজেদের সমসংখ্যক শেয়ার ইস্যু করতে হবে।

সেই হিসাবে সামিন ফুডের একটি শেয়ারের বিপরীতে আরএন স্পিনিং একটি নতুন শেয়ার ইস্যু করেছে। কিন্তু নিজেদের একটি শেয়ার হয়ে গেছে ০.১৭৯ টিতে। অর্থাৎ প্রতি ৫.৫৯টি শেয়ার একটি শেয়ারে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে ওষুধ ও রসায়ন খাতের ফার কেমিকেলসের সঙ্গে একীভূত হয়েছে এস এফ টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে ফার কেমিকেলসের প্রতি তিনটি শেয়ার পরিণত হয়েছে একটি শেয়ারে।

সোমবার রেকর্ড ডেটের আগের দিন রোববার আর এন স্পিনিং মিলসের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সায়। রেকর্ড ডেট শেষে মঙ্গলবার শেয়ারটির দর স্থির হয় ২৩ টাকা ২০ পয়সায়। অথচ ৫.৫৯টি শেয়ারের দর রোববার ছিল ৩৪ টাকা ৬৫ পয়সা। অর্থাৎ একীভূত হওয়ার কারণে প্রথম দিনই বিনিয়োগকারীর লোকসান হয় ১১ টাকা ৪৫ পয়সা।

শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় দিনের লেনদেনে সেই ২৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৯.৯১ শতাংশ কমে দাম দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ দুই দিনেই আরএন স্পিনিংয়ের বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ৩৯.৬৮ শতাংশ দাম।

ফার কেমিকেলসের ক্ষতি সেই তুলনায় কম। কোম্পানিটি শেয়ারদর গত কয়েক মাস ধরে তার ফ্লোর প্রাইস ১০ টাকা ৬০ পয়সার নিচে নামতে পারছিল না। মঙ্গলবার একীভূত হওয়ার কারণে প্রতি তিনটি শেয়ার পরিণত হয় একটিতে। সেই হিসাবে দর সমন্বয় হওয়ার কথা ছিল ৩১ টাকা ৮০ পয়সায়। কিন্তু দিন শেষে দর স্থির হয় ৩১ টাকা ৩০ পয়সায়।

ফ্লোর প্রাইসে পরিবর্তন না আসার কারণে আসল ক্ষতিটা হয় বুধবার। শেয়ারের দর প্রায় ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ২০ পয়সায়। আগের হিসাবে প্রতিটি শেয়ারের দর হয় ৯ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ এই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা দুই দিনে হারিয়েছেন ১১.৩২ শতাংশ।

ডিএসইর ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ ডিবিএর বিস্ময়

আর এন স্পিনিং ও ফার কেমিকেলসের বিনিয়োগকারীদের এই আর্থিক ক্ষতির ঘটনটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলেছেন বাংলাদেশ স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও।

তিনি বলেন, এখানে যা হয়েছে এটা অস্বাভাবিক। এই দুই কোম্পানির ট্রেন্ড তো এভাবে শুরু হওয়া উচিত হয়নি। আমাদের পক্ষ থেকে ডিএসইকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত দুটি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত থাকুক। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। এখন বিনিয়োগকারী লোকসানের সাগরে পড়ে গেল। শুধু তাই না, লোকসান আরও বাড়তে পারে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক আল আমিনের প্রতিক্রিয়া রোজারিওর মতই।

তিনি বলেন, কোন ভিত্তিতে এই ঘটনাটি ঘটল, তা তো স্পষ্ট নয়। একীভূত করার পর লেনদেনের প্রথম দিনেই তো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা বা ঘোষণা থাকা উচিত ছিল। ট্রেডারদের প্রতিও নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল। আমি মনে করে এটার জন্য পুরোপুরি দায়ী ডিএসই। এখানে বড় ধরনের কমিউনিকেশনস গ্যাপ ছিল।

ডিএসইতে ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়সহ নানা বিষয়ে এর আগেও ‘অদ্ভুত’ ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় প্রথমবারের মত ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার পর একটি কোম্পানি ৫০ শতাংশ রাইট শেয়ার অনুমোদন করার পর কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা বাড়লেও ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীর স্বয়ংক্রিয় মুনাফা তৈরি হয়।

একাধিক কোম্পানি বোনাস শেয়ার ইস্যুর পরেও ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় হয়নি একইভাবে।

এসব বিষয়ে আল আমিন বলেন, অনিয়ম ও আরও নানা বিষয় নিয়ে আমি অনেক ফোরামে কথা বলেছি, কিন্তু কোথাও কিছু হয়নি, আর হবে বলে মনেও হয় না। দিন শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই।

বোনাস শেয়ার নিয়ে কত কিছু ঘটেছে। দাম সমন্বয়ের পর বিএসইসি বোনাসের প্রস্তাব নাকচ করেছে। আবার কোনো কোম্পানির নগদ ও বোনাস শেয়ারের রেকর্ড ডেট একটিই ছিল, কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি হয় আলাদা। কোনো কোম্পানির বোনাস শেয়ারের প্রস্তাব অনুমোদন হয় দুই মাসেই, কোনোটার ক্ষেত্রে আবার তা অনুমোদন হতে হতে ১০ বা ১১ মাস লেগে যায়।

পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, আপনারা বলেন পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে কেন হবে না?

দাম আর কত কমতে পারবে?

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, দুটি কোম্পানির দর আবার তার ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসতে পারবে।

অর্থাৎ আর এন স্পিনিং মিলসের শেয়ার দর আবার ৬ টাকা ২০ পয়সায় আর ফার কেমিকেলসের দর ১০ টাকা ৬০ পয়সায় নামা সম্ভব। যেহেতু হাতের শেয়ার কমে গেছে, তাই সমন্বয় করে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া না হলে তো বিনিয়োগকারীর ব্যাপক ক্ষতি হবে, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এর জবাব আমি দিতে পারব না। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top