Homeবিএসইসিছত্রিশ বছর ধরে ডিএসইর অডিট কোম্পানি কাসেম অ্যান্ড কো.

ছত্রিশ বছর ধরে ডিএসইর অডিট কোম্পানি কাসেম অ্যান্ড কো.

স্টাফ রিপোর্টার: ছত্রিশ বছর ধরে আর্থিক হিসাব-নিকাশ নিরীক্ষা করে আসছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে। তিন যুগ ধরে চলছে এই কার্যক্রম। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্প্রতি ড. তারিকুজ্জামান এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসইর বোর্ড। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর বোর্ড সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা আগামী ২১ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায় চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, গত সাড়ে তিন দশক ধরে ডিএসইর আর্থিক হিসাব-নিকাশ নিরীক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে এ কাসেম অ্যান্ড কো. চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষার জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কিছু নীতিমালা রয়েছে।

তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একজন নিরীক্ষক টানা তিন বছর নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তবে অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন কোনো বিধিমালা নেই। নৈতিকতার প্রশ্নে একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে দীর্ঘসময় নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত নয় বলে মনে করেন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, দীর্ঘসময় ধরে একই নিরীক্ষক দায়িত্ব পালন করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে নিরীক্ষক বা নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের এক ধরনের সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে অনেক সময় ছোট কোনো অনিয়ম ধরা পড়লেও নিরীক্ষক সম্পর্কের খাতিরে সেটি এড়িয়ে যেতে পারে। এতে নিরীক্ষকের স্বাধীনতা খর্ব হয়।

ডিএসই ৩৬ বছর ধরে একই নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি জানার পর তিনি বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব? এটা তো অসৎবৃত্তি। হয়ত এতে আইনী কোনো বাধা নেই, তবে এটি নৈতিকতার বিষয়। বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বা কারো চোখে কেন পড়ল না সেই প্রশ্ন তার।

ডিএসইর সূত্র বলছে, সর্বশেষ বৈঠকে ড. তারিকুজ্জামান নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩৬ বছর ধরে এ কাসেম অ্যান্ড কো ডিএসইর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ডিএসইর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, যা নিরীক্ষকের স্বাধীনতার মৌলিক নীতির পরিপন্থী। তার পরামর্শ- এক্ষেত্রে ডিএসইর সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক পরিবর্তন করাই শ্রেয়।

এ বিষয়ে ড. তরিকুজ্জামানের সঙ্গে একমত ডিএসইর নিরীক্ষা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি (এ অ্যান্ড আরএমসি)। কমিটিও এ কাসেম অ্যান্ড কোম্পানিকে সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক হিসেবে পুনরায় নিয়োগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

ডিএসই কমিটি প্রাসঙ্গিক আইন, নিয়ম, প্রবিধান ও নির্দেশনা অনুসরণ করে বাংলাদেশের বড় চারটি অনুমোদিত নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ড. তারিকুজ্জামান বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে নিরীক্ষক নিয়োগের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় গুরুত্বারোপ করা হয়। ডিএসই একই নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করেছে, কিন্তু কেউ প্রশ্ন তোলেনি।

তিনি বলেন, একই নিরীক্ষক দিয়ে দীর্ঘদিন নিরীক্ষা করানো অ্যাকাউন্টিং আদর্শ অনুযায়ী ঠিক না। এটি নিরীক্ষকের স্বাধীনতা খর্ব করে। আর্থিক হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে বিষয়টি বোর্ড নিরীক্ষক পরিবর্তনে সম্মতি দিয়েছে।

এ কাসেম অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান বলেন, আইনি বাধা না থাকলেও এক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়ে প্রশ্ন তো থাকেই। তবে সব নিরীক্ষকের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। ডিএসই নিয়োগ দিয়েছে বলেই নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক বলেন, ডিএসই নিজস্ব আইন ও রেগুলেশন অনুযায়ী চলে। প্রতিষ্ঠানটি আইন অনুযায়ী নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়। নিরীক্ষক নিয়োগ-বিধি বা আইনসম্মত হয়েছে কি না, কমিশন তা খতিয়ে দেখতে পারে। শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীলতা এবং ফ্লোর প্রাইসের মধ্যে শেয়ার লেনদেন কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর রাজস্ব ও মুনাফা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর আয় ২৫ শতাংশ কমে ২৩৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে; যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর থেকে সর্বনিম্ন। এছাড়া কর-পরবর্তী নিট মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম।

মুনাফা কমে যাওয়ায় ডিএসই ২৩ আর্থিক বছরের জন্য তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য চার শতাংশ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। আগের অর্থবছরে ডিএসই তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত