সকল মেনু

বৃহস্পতিবার সাসটেইনেবল রেটিংয়ে ১০ ব্যাংক ও তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান

চতুর্থবারের মতো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) সাসটেইনেবল রেটিং-২০২৩ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে চার সূচকে উত্তীর্ণ হওয়া ১০টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। ২০২২ সালের রেটিংয়ে স্থান পেয়েছিল সাতটি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের অংশ হিসেবে ২০২০ সাল থেকে সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০২৩ সালের কার্যক্রম মূল্যয়ন করে সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করা হয়। এতে স্থান পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও উত্তরা ব্যাংক। এর মধ্যে ইস্টার্ন, এক্সিম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও উত্তরা ব্যাংক প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে। বাকি ছয়টি ব্যাংক ২০২২ সালের রেটিংয়েও স্থান পেয়েছিল।

গত বছরের রেটিং থেকে বাদ পড়েছে কেবল শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এবারের রেটিংয়ে স্থান পাওয়া তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড।

টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটর), সবুজ পুনঃঅর্থায়ন (গ্রিন রিফাইন্যান্স), সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা (কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি) সূচকের ভিত্তিতে সাসটেইনেবল রেটিং প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সাল থেকে প্রকাশিত চারটি রেটিং পর্যালোচনা করে দেখা যায়, টানা চার বছর ধরেই সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স স্থান পেয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোকে সুশাসন, শুদ্ধাচার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে অনুপ্রাণিত করতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়ন করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ মূলত এটি তৈরি করে। সবক’টি সূচকেই যারা উত্তীর্ণ হতে পারে, তালিকায় সেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে ২০২০ সালে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসির নির্দেশনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনার আলোকে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবল রেটিং-২০২০-এর শীর্ষ ১০ ব্যাংক ও পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২১ ও ২০২২ সালের রেটিংও প্রকাশ করা হয়েছিল। চতুর্থবারের মতো এবার রেটিং প্রকাশ করা হলো ২০২৩ সালের কার্যক্রমের ভিত্তিতে।

রেটিংয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার হয়েছে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক, সবুজ পুনঃঅর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা। এর মধ্যে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশকের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন, ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, গ্রামীণ অর্থায়ন, নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, কৃষিতে টেকসই অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়নের ক্যাটাগরি ও প্রকল্পের পরিমাণ, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সবুজ ব্যাংকিংয়ের চর্চাকেও এ মানদণ্ডে অন্যতম নির্ধারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকি ভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত, লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও, নিট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও, কোর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, সম্পদের বিপরীতে আয়, ইকুইটির বিপরীতে আয়, নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ও এফিশিয়েন্সি রেশিওর মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে।

শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিলের অনুদানের অর্থ ব্যয়ের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় এসেছে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি সবুজ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে বার্ষিক পুনঃঅর্থায়নের হার, খাত ও পণ্যভিত্তিক পুনঃঅর্থায়নের পাশাপাশি গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলার ও ইউরো কম্পোনেন্টের ওপর ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা সাসটেইনেবল রেটিংয়ের মান নিয়ে বেশ অসন্তোষও আছে। ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা চারটি রেটিংয়েই এমন কিছু ব্যাংক স্থান পেয়েছে, যেগুলো এ তালিকায় থাকার কথা নয়। আবার কিছু ভালো ব্যাংকের নাম বরাবরই এক্ষেত্রে উপেক্ষিত থেকেছে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে যাথাযথ তথ্য ও পরিস্থিতি আমলে নেয়া হয় কিনা সেটি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top