সকল মেনু

পুঁজিবাজার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কারের দাবি বিএসইসির কর্মকর্তাদের

দেশের পুঁজিবাজার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংস্কারের দাবি তুলেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএসইসির কর্মকর্তারা সংস্থাটিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগে বিরোধিতা করে সংস্কার চাইছেন। পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে সংস্কার চাইছেন তারা।

তথ্যানুসারে, গত মঙ্গলবার বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।

সভায় গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের ছাত্র-ছাত্রী, শিশু ও অন্যান্য নাগরিক খুনের ঘটনার বিচারসহ তীব্র নিন্দা ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এছাড়া যারা আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়।

সভায় বিএসইসির কর্মকর্তারা পুঁজিবাজারের অধ্যাদেশ, আইন ও বিধিবিধানের বাইরে কোনো সুপারিশ বা কোনো ধরনের কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া বুধবারও বিএসইসির কর্মকর্তারা এসব বিষয় নিয়ে বেশ সরব ছিলেন। এ সময় তাদের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।

এক্ষেত্রে কমিশনের অভিজ্ঞ সিনিয়র কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে নিয়োগ দিতে হবে। পুঁজিবাজারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে আইনের ১৭ ধারা মোতাবেক কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষমতা অর্পণ (ডেলিগেশন অব পাওয়ার) করতে হবে। কর্মকর্তা ও  কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিকিৎসা সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে।

কমিশনের সিএসআর তহবিল যেখানে-সেখানে প্রদান না করে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) টিডিআর হিসেবে রক্ষিত কমিশনের ৪৫ কোটি টাকা অবিলম্বে ফেরত আনতে হবে।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা না রেখে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। তাছাড়া তাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে বাজারের উন্নয়নে সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন না। একসময় কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তথা নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কমিশন অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কমিশন এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অথচ এসব সিদ্ধান্তের দায় তাদের ওপরও এসে পড়ছে।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএসইসির কর্মকর্তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ করা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কার্যক্রমের দায় নিজেদের ওপর নিতে চান না। এ কারণে তারা সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা ও সাবেক কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমানে বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ দুই কমিশনার অনুপস্থিত থাকার কারণে কমিশনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, বিএসইসির শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে বিএসইসি ও পুঁজিবাজারকে গতিশীল রাখতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। শিগগিরই আমাদের দাবি ও সুপারিশগুলো সরকারের কাছে পৌঁছানো হবে।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা দুইদিন ধরে অফিসে আসছেন না বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. মহসিন চৌধুরী। বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার শামসুদ্দিন গত মাসে সরকারি সফরে কানাডা গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান দেশে ফিরে এলেও তিনি গত দুইদিন অফিসে আসেননি। কমিশনার শামসুদ্দিন দেশে ফিরেছেন কিনা সেটি বিএসইসির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করতে পারেননি।

আরেক কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী দেশে থাকলেও তিনি দুইদিন ধরে অফিসে আসছেন না। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএসইসির কমিশনার রুমানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। রুমানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি গত দুইদিন অফিস করেছেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান কানাডা যাওয়ার আগে রুমানা ইসলামকে চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্ব অর্পণ করে গিয়েছিলেন। বিএসইসির আরেক কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামান গত দুইদিন পুরো সময় অফিস করেছেন বলে জানা গেছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বুধবার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। অন্যদিকে দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেরও (সিএসই) সূচক ও লেনদেন ছিল ঊর্ধ্বমুখী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top