শাহীনুর ইসলাম শানু: ‘সরকারের কিছু লোকের অসহযোগিতার কারণে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউনাইটেড এয়ারের অপারেশন (উড্ডয়ন) বন্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের নানামূখী অসহযোগীতার কারণে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমিও বৈষম্যেও শিকার। ২০১৬ সালের পর থেকে চালু না করায় এয়ারগুলো এখন ব্যবহার অনুগযোগী হতে চলেছে। এগুলো দেশের সম্পদ, রক্ষার দায়িত্ব সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের। তবে নতুনভাবে উড্ডয়ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা চাই।’
লন্ডন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শুক্রবার রাতে (৯ আগস্ট) এসব কথা বলেন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী। বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে নতুৃন করে চালুর দাবি জানান তিনি।
ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই ছিল অসহযোগীতামূলক আচরণ। তার মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে বিএসইসির অনেকের কাছে গিয়েছিলাম। নীতি সহায়তা দিতে তাদের অনুরোধ করেছিলাম। তার কেউ আমার কথাগুলো বুঝতে চায়নি। কেন, তা এখন বুঝেছি।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এখন আমার প্রতি নানান অভিযোগ তুলে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। শেষ পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদ থেকেও আমাকে বিতাড়িত করা হয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস ও তার উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ইউনাইটেড এয়ারের ১০টি বিমান দেশের সম্পদ। বিগত সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্থ করে তুলেছেন। আমি দেশের সম্পদগুলো ব্যবহার করে কিছু কর্মস্থান বৃদ্ধি ও দেশকে রাজস্ব দিতে চাই। এজন্য চাই সরকারের নীতি সহযোগিতা; যা বিগত সরকার করেনি।’
তিনি বলেন, ‘শুনতে পাচ্ছি- হাজার কোটি টাকার সম্পদ এয়ারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তারা (নতুন পর্ষদ) বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারী এবং নতুন সরকারকে এটি রক্ষার অনুরোধ জানাই। এগুলো দেশের সম্পদ।’
ইউনাইটেড এয়ারের ২০০৯ সালে অপারেশন শুরু, বিশ্বের ২৩ টি দেশে নিজস্ব নামে চলে। এরপরে ২০১০ সালে স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্তির পরে ২০১২ সালে বিএসইসি নির্দেশনা দেয়- কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের ধারণ করতে হবে এবং মূল উদ্যোক্তদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক। নতুন নির্দেশনার পরে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময়ে উদ্যোক্তাদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে বৈঠক করেছি, মামলাও ঠুকেছি।’
‘সুদূরপ্রসারী এর প্রভাব কি প্রভাব পড়বে- তা তাদের বুঝিয়েও কোন সুফল আসেনি; বরং ব্যর্থ হয়েছি। যার ফলাফল বর্তমান শেয়ার মার্কেট’- বলেন তিনি।
‘এখন বুঝতে পারছি, সরকার এটা কেন করেছিল। কিছু লুটেরা গ্রুপ অব কোম্পানিকে অনৈতিকভাবে দেশের ব্যাংকগুলো লুট করতেই সুযোগ দিয়েছিল। যেমন- চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। দেশের বেসরকারি ৭টি ব্যাংক থেকে বেনামি ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার লুট ও পাচার করেছে- বিভিন্ন সংবাদপত্র এটা প্রকাশ করছে। এশিয়ার শ্রেষ্ট ইসলামী ব্যাংক এখন বিপর্যস্থ।’
‘২০১২ সালে নতুন কোম্পানি আইনে উদ্যোক্তাদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করে বিএসইসি। পুঁজিবাজার থেকে এসব ব্যাংকের ২ শতাংশ সাধারণ শেয়ার কিনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিজস্ব লোক বসায় লুটেরা গ্রুপগুলো। তারপরে বেনামি ঋণ নিয়ে টাকা পাচার শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোন এয়ার কোম্পানি ১০টি এয়ার বাস দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমানেরও ১০টি এয়ার নেই; যা ইউনাইটেড এয়ারের ছিল। আর এটি ছিল হাসিনা সরকারে অসন্তোষের মূল কারণ। অন্যদিকে, আমি রাজনীতি বিমুখ মানুষ; যার শাস্তি হিসেবে বন্ধ হয়েছে এ কোম্পানি।’
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কোম্পানির উদ্যোক্তা হিসেবে আমার এখনও ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আমি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তবুও নানান অভিযোগ তুলে স্বেচ্ছাচারি মনোভাব নিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ থেকে আমাকে বের করে দিয়েছে। হেনস্থা করতে এমনও অপকর্ম নাই তারা করছে না’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে হারমাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানকে অপারেশন চলাকালে এমডি বানানো হয়েছিল। (বর্তমানে এনআর ব্যাংকের চেয়ারম্যান) তিনি একদিনও চালাতে পারেননি। তিনিও তো এমডি ছিলেন, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। কেননা বিদেশে তার গাড়িতে করে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঘুরে বেড়ান; আমি তো সেই সুবিধা দিতে পারবো না।’
‘তাকে যে সুবিধা দিয়েছে, সেই সফল হয়েছে’ বলেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘নতুন পর্ষদের সময় অনেক পার হয়েছে, একটি বিমানও অপারেশনে নিতে পারেনি। পারবে কি করে- অভিজ্ঞতা থাকা চাই। এখন শেয়ার বিক্রি করে শুধুই বেতন নিচ্ছেন। শুনতে পাচ্ছি- দেশের হাজার কোটি টাকার সম্পদ এসব এয়ারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তারা বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাই বিনিয়োগকারী এবং নতুন সরকারকে এটি রক্ষার অনুরোধ জানাই।’
‘এখানে ১ লাখ ৬০ হাজার বিনিয়োগকারী আছেন, তাদের স্বার্থে আমি সরকারের কাছে প্রার্থনা করছি- দেশের সম্পদ রক্ষায় সবার সহযোগিতা চাই। বিশেষত বৈষম্যবিরোধী এই সরকারের কাছে দাবি- আমিও বৈষম্যেও শিকার। তাই সবার সহযোগিতায় নুতন করে ইউনাইটেড এয়ার শুরু করতে চাই। দেশে বিদেশি বিনিয়োগও আসবে।’
‘অন্তর্বতী সরকারের কাছে চাই নীতি সহায়তা; যে শুদ্ধাচার নীতির ভেতরে দিয়ে পরিচালিত হবে দেশের সব কোম্পানি।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।