খোঁজ মিলছে না অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের। তিনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। জনস্রোতে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি রাষ্ট্রায়ত্ব এই প্রতিষ্ঠানে আর প্রবেশ করেননি।
তীব্র প্রতিবাদের পরেও শেখ হাসিনা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষককে দ্বিতীয়বার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। জনরোষে দেশেই নিজেকে আড়াল করেছেন, নাকি দেশান্তর হয়েছেন তা জানা যায়নি। তবে পুঁজিবাজারের এই অভিভাবককে ঘিরে সোস্যাল মিডিয়ায় নানা নেতিবাচক শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে।
সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের নিচে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিকিউরিটিরা বলেন, গত সোমবারের পরে তিনি আর অফিসে আসেননি। তবে কেন তিনি আসছেন না বা কোথায় আছেন তিনি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ কমিশনারও।
একইসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের খোঁজ মিলছে না। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির শীর্ষ পদে ছিলেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এর পরপর দেশের পুরো দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বিগত সরকারের অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ, দলীয় নেতা গোপনে দেশ ছেড়ে যান ও আত্মগোপন করেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আত্মগোপন করেন। কারণ তার মেয়াদকালে শেয়ারবাজারে ব্যাপক লুটতরাজ হয়েছে। তার সঙ্গে যোগসাজশ করে হাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান। বাজারে লাগামহীন কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফতুর করে দিয়েছেন আবুল খায়ের হিরো, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ শিবলীঘনিষ্ট চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিতে পর্ষদ পুনর্গঠনের নামে অনেক কোম্পানিতে নিজের ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে দেন এবং নতুনভাবে লুটপাটের সুযোগ করে দেন তিনি। ব্যবসায় মুনাফা না করতে পেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিকে নিজের লোকদের হাতে তুলে দিয়ে পুনরায় বাজারে এনে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেন তিনি। তার বিরুদ্ধে টাকা পাচার এবং পাচারকারীদের সহায়তা করারও অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এর আড়ালে টাকা পাচারের সুযোগ করে দেয়া। এসব সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিতেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতেন এক ঝাঁক ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতা। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কারসাজি হয়েছে, সেসব কোম্পানি বা তার উদ্যোক্তারা এসব রোড শো স্পন্সর করেছেন। শিবলী রুবাইয়াতের উদ্যোগে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রোড শো বা বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম শেয়ারবাজারে শেয়ার লেনদেনকারী যেসব মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়েছেন সেগুলো নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক।
বেশিরভাগ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং তার নিজের ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক অপরাধের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত তার বন্ধু জাভেদ মতিন এবং দেশের শেয়ারবাজারে একাধিক কারসাজিতে অভিযুক্ত আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রীকে ব্রোকারহাউজের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ স্মরণকালের সর্বনিম্ন। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফ্লোরপ্রাইস নামের কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের পতন ঠেকিয়ে রাখতে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের মতো দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় উল্লম্ফন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থা পুরো বিপরীত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।