শেয়ারবাজারের আরও তিন কোম্পানির সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস উঠে যাচ্ছে রোববার। কোম্পানি তিনটি হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ার। আর বাকি তিনটির ফ্লোর প্রাইস উঠবে আগামী বুধবার।
সেই কোম্পানি তিনটি হলো ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম। বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিত বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। তবে বাসা থেকে তিনি ৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার–সংক্রান্ত আদেশে সই করেন।
অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও শনিবার (১০ আগস্ট) পদত্যাগ করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
ফ্লোর প্রাইস সম্পর্কে বিএসইসির আদেশ বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ারের ওপর ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকবে। এই তিন কোম্পানিসহ বর্তমানে শেয়ারবাজারের ৬টি কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস রয়েছে। বিএসইসির আদেশ অনুযায়ী, বাকি তিনটি শেয়ারের ওপর ফ্লোর প্রাইস রোববার থেকে প্রত্যাহার হবে।
ফ্লোর প্রাইস উঠে গেলেও এসব শেয়ারের দামের উত্থান–পতনের ক্ষেত্রে বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার বা মূল্যসীমা আরোপিত থাকবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, বেক্সিমকো লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ারের দাম দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে। আর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত শেয়ারবাজারে ৬ আগস্ট থেকে বেশ গতি দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি এই তিন দিনে ৬৯৬ পয়েন্ট বা ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এমন প্রেক্ষাপটে ৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি।
শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে ২০২০ সাল থেকে কয়েক দফায় শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। এর ফলে শেয়ারের দাম বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সীমার নিচে নামার কোনো সুযোগ ছিল না। সর্বশেষ দফায় ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল বিএসইসি। এরপর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে দেড় বছর ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেন হয়নি। পুঁজিবাজারেও একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
সর্বশেষ ধাপে গত বৃহস্পতিবার ৬টি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে ৩ শতাংশের সার্কিট ব্রেকার বা মূল্যসীমা এখনো বহাল রয়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারকে তার স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে ৩ শতাংশ মূল্যসীমার বিধানটিও তুলে নেওয়া দরকার। কারণ, এই সীমার কারণে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা পাওয়া যায় না। শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে শেয়ার কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন ব্যক্তিশ্রেণির বড়–মাঝারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। যেহেতু বাজারে এখন কিছুটা গতি ফিরেছে, তাই এখনই এ মূল্যসীমা তুলে নেওয়ার ভালো সময় বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।