প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) রোড শো স্থগিত করেছে ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড। ২১ আগস্ট, বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে রোড শো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওতে পুঁজিবাজারে আসার পরিকল্পনা কোম্পানিটির।
কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটির পুঁজিবাজার থেকে ২৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার কথা। এই অর্থ দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।
শান্তা ইক্যুইটির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটি চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১০ মাসের আর্থিকবিবরণীর ভিত্তিতে প্রসপেক্টাস তৈরি করেছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে জুন শেষের (জুলাই’২৩-জুন’২৪) নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নতুন আবেদন করা হবে।
কোম্পানিটির আইপিও সংক্রান্ত আর কোনো তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি। কোম্পানির নিজের ওয়েবসাইট এবং ইস্যু ম্যানেজারের ওয়েবসাইটে আইপিওর রেড হেয়ারিং প্রসপেক্টাস নেই। এমনকি কোম্পানির ওয়েবসাইটের কোনো লিংকও কার্যকর নয়। সেখানে বার্ষিক প্রতিবেদনের উল্লেখ থাকলেও ক্লিক করলে তা খুলছে না।
তবে ওরিয়ন গ্রুপের ওয়েবসাইটে ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য আছে। এ তথ্য অনুসারে, ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড মূলত একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি। বর্তমানে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছে। এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১১০ মেগাওয়াট। এটি একটি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র (Independent Power Plant-IPP), যার মেয়াদ ১৫ বছর। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে তথা তখন থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ওবায়দুল করিম কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আর এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তার ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম। বর্তমানে ওরিয়ন গ্রুপের দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। কোম্পানি দুটি হচ্ছে- ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড ও ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। ২০১৩ সালে বাজারে আসে ওরিয়ন ফার্মা।
গত দেড় বছরে কোম্পানি দুটির শেয়ারে বড় রকমের উত্থান-পতন দেখা গেছে। কারসাজির মাধ্যমে এদের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক রকম বাড়ানো হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুসারে, তিন বছর আগে ওই বাজারে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারের দাম ছিল ৪০ টাকা। ব্যবসায়িক পারফরম্যান্সে তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও ২০২২ সালের শুরুর দিকে শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা ১৫০ টাকায় ওঠে। আজ ডিএসইতে এই শেয়ারের সর্বশেষ দাম ছিল ৫১ টাকা ৮০ পয়সা।
অন্যদিকে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের দাম ৩৬ টাকা থেকে টেনে ৯৭১ টাকায় তোলা হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কোম্পানি দুটির উদ্যোক্তারা নিজেরা বেনামে শেয়ার কিনে ও কারসাজি করে শেয়ারের দাম এতটা বাড়িয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর নিলামকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করা, যাতে ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেডের শেয়ারে ভাল দাম পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, সাধারণ চর্চা অনুসারে, কোনো শেয়ারের দাম ৩০/৪০ শতাংশের বেশি বাড়লেই স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিকে নোটিস করে, তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য আছে কি-না জানতে চায়। কিন্তু ওরিয়ন ফার্মা ও ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের মূল্য বেড়ে কয়েকগুণ হলেও কোনো কোয়ারি দেওয়া হয়নি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের হস্তক্ষেপের কারণে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি এ বিষয়ে নিরব থাকতে বাধ্য হয় বলে অভিযোগ আছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।