সকল মেনু

ইসলামী ব্যাংকে আসছে কৌশলগত পরিবর্তন

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পিএলসিতে আসছে কৌশলগত পরিবর্তন। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এস আলমের দখলে থাকা সব ব্যাংকের পর্ষদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য ব্যাংকগুলো নিয়েও একই সিদ্ধান্ত হবে বলে বুধবার (২১ আগস্ট) জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

তার আগের দিন ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও মাল্টি মুড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংকের ৮১ শতাংশ শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। একইসঙ্গে গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৬টি ব্যাংকের ঋণ হস্তান্তরেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোম্পানি আইন ভেঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ৮১ শতাংশ শেয়ার কেনা ও ৭৫ হাজার কোটি টাকা নামি-বেনামি ঋণ গ্রহণের দায়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নীতি বর্হিভূতভাবে দেশের বাইরে টাকা পাঠানোয় দুদকের জালে আটকা পড়েতে যাচ্ছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম)। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগের আদেশে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম দ্রুত গতিতে চলছে। এর আগে গত বছরের ১৩ আগস্ট এস আলমের অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক।

ইসলামী ব্যাংক ঘিরে গভর্নরের সংবাদ সম্মেলন
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বেশির ভাগ শেয়ার এস আলম গ্রুপের হাতে থাকায় আপাতত ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়া হবে। তারাই ব্যাংকটি পরিচালনা করবেন বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে, সবই অনুসরণ করা হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলো নিয়েও একই সিদ্ধান্ত হবে।

যেসব ব্যাংকে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে, সেসব ব্যাংক কারা চালাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, সরকার কোনো ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে না। আপাতত স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে ব্যাংকগুলো চলবে। এস আলম গ্রুপ ছাড়া অন্যদের হাতে ২ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে পরে তারা পর্ষদে আসতে পারবেন। এস আলম গ্রুপের কাছে কত ঋণ আছে, জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, নামে-বেনামে কত ঋণ আছে, তা জানা যায়নি। বেনামি ঋণের তথ্য এখনো আমাদের কাছে নেই। তবে এসব তথ্য বের হবে। এ জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায় নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। এর জবাবে গভর্নর বলেন, এটা আমার আসার আগের ঘটনা। আগামী দিনে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, আমি চাই না। কারও যদি কোনো কথা থাকে, তাহলে আমার দরজা খোলা আছে। আমি শুনে যদি যৌক্তিক দাবি মনে হয়, তাহলে তা মানার চেষ্টা করব। কিন্তু অযৌক্তিক কোনো দাবি মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দরকার হলে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের বিষয়ে গভর্নর বলেন, এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি পুনর্গঠন করার জন্য, যাতে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী একই পদে দীর্ঘদিন না থাকে।

বিভিন্ন ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা এক দিনের ব্যাপার নয়। আমি এসেই বড় রকমের নাড়াচাড়া দিতেও চাই না। কারণ, আমাদের হাতে অনেক কাজ। আমাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা। বাংলাদেশ যেন খেলাপি না হয়, সে জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, আমরা যেন অবনমিত না হই, সহযোগী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যেন আমরা সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারি, এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ।

অনুসন্ধানে দুদক, জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন এস আলম গ্রুপ প্রধান
দুর্নীতি দমন কমিশনের জালে আটকা পড়তে যাচ্ছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম)। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগের আদেশে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এর আগে গত বছরের ১৩ আগস্ট এস আলমের অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, এস আলমের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক আদেশের পর দুদক অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগের আদেশের কপি পায় দুদক এরপর ফাইলটি আবার খোলা হয়েছে। দুদকের মানি লন্ডারিং শাখা থেকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছেন উপপরিচালক মো. নূর-ই-আলম। অনুসন্ধান তদারক করছেন শাখার পরিচালক মোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী।

৮২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তর বন্ধ
এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৬ ব্যক্তি ও ৫৬ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই ৮২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিএসইসিকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং প্রতিনিধি। তারা চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে।

শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মায়মুনা খাতুন। এছাড়াও রয়েছেন পরিবারের সদস্য আতিকুর নেসা, শারমিন ফাতেমা, মারজিনা শারমিন, ফারজানা বেগম, শাহানা ফেরদৌস, রহিমা বেগম, মোহাম্মদ আবদুল মালেক, আশরাফুল মোস্তফা চৌধুরী, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, বেলাল আহমেদ, মাহমুদুল আলম, আশরাফুল আলম, বদরুন নেসা আলম, ওয়াহিদুল আলম সেথ, রোকয়ে ইয়াসমিন, শহিদুল আলম, হালিমা বেগম, রাশেদুল আলম, মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল, ওসমান গনি ও শহিদুল আলম।

প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, এবিসি ভেঞ্চার লিমিটেড, আরমাডা স্পিনিং, বাংলাদেশ পেট্রো কেমিক্যাল, বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস কোম্পানি, ব্রডওয়ে ইম্প্যাক্স কোম্পানি, সি অ্যান্ড এ এক্সেসরিস, সি অ্যান্ড এ ফেব্রিকস, কারোলিনা বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, ডাইনামিক ভেঞ্চার লিমিটেড, এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, এক্সেলসিয়র ইম্পেক্স কোম্পানি, ফতেহাবাদ ফার্ম, জেনেসিস টেক্সটাইল এক্সেসরিস অ্যান্ড অ্যাপারেলস, গ্র্যান্ড বিজনেস লিমিটেড, হাসান আবাসন প্রা. লিমিটেড, হাইক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, হানিওয়েল সিকিউরিটিজ করপোরেশন, আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলস।

তালিকায় আরো আছে- জেএমসি বিল্ডার্স, কর্ণফুলী ফুডস, কর্ণফুলী প্রাকৃতিক গ্যাস, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিল, কিংস ওয়ে এনডিভার্স লিমিটেড, লিডার বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, লায়ন সিকিউরিটিজ, লায়নহেড বিজনেস রিসোর্স, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মিল্কওয়ে ইম্প্যাক্স লিমিটেড, মডার্ন প্রপার্টিজ, নওশিন স্টিল, ওশ্যান রিসোর্ট, পদ্মা এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ট্রেডিং, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, পিকস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, পারসেপটা এন্ডিভার্স লিমিটেড, প্লাটিনাম এন্ডিভার্স লিমিটেড, পোর্টম্যান সিমেন্ট লিমিটেড, প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট, পুষ্টি ভেজিটেবল ঘি, রিল্যায়াবল এন্টারপ্রাইজ, শাহ আমানত প্রাকৃতিক গ্যাস, সলিড ওয়্যাক ইন্স্যুরেন্স, সোনালী কর্পো লজিস্টিক, ইউনিগ্লোব বিজনেস রিসোর্স, ইউনিক ইনভেস্টমেন্ট সিকিউরিটিজ, ইউনিটেক্স সিমেন্ট, ইউনিটেক্স স্টিল মিলস, ইউনিটেক্স ট্রি লিমিটেড, ভাইব্রান্ড এন্টিভার্স, ভেক্টর ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস, ওয়েসকো লিমিটেড এবং ওয়েস্টার্ন ডিজাইনার লিমিটেড।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top