সকল মেনু

ঘুরপাক খাচ্ছে আমরা টেকনোলজিসের পাওনা পরিশোধ

টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা টেকনোলজিস। টাকা না দিয়ে কৌশলে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এর আগেও টাকা না দেওয়ায় সাজার মুখে পড়েছিল আমরা টেকনোলজিস। তারপরও টাকা না দিয়ে বিটিআরসিকে ঘোরাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, পাওনা আদায়ে বিটিআরসি যখনই উদ্যোগ নিয়েছে, তখনই কিস্তির সুযোগ প্রার্থনা করেছে আমরা টেকনোলজিস কর্তৃপক্ষ। সুযোগ দিলে কিস্তির সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলেছে। সেটা মঞ্জুর করলে বিলম্ব ফি মওকুফের আবেদন করেছে। তারপরও পাওনা আদায় করা যায়নি। এই বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে আমরা টেকনোলজিসের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি।

তথ্যমতে, সর্বশেষ বছরের লাইসেন্স ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং, লেট ফি ও কর বাবদ বকেয়া পরিশোধ করছে না আমরা টেকনোলজিস। এতে করে প্রতিষ্ঠানটির কাছে এখন বিটিআরসির পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

বিটিআরসির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, পাওনা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটি সময়ক্ষেপণ করছে। পাওনা আদায়ে কী ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পাওনা টাকা চেয়ে বারবার নোটিশ দিলেও আমরা টেকনোলজিস কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৪১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বকেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ৫০ শতাংশ ব্যান্ডইউথ ক্যাপাসিটি ব্লক করে বিটিআরসি।

পরে ওই মাসের শেষের দিকে ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করলে ব্লক তুলে নেওয়া হয়। তবে বাকি টাকা পরিশোধ না করায় এক সময় বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা ২৪টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয় বিটিআরসি।

আমরা টেকনোলজিস ১০টি কিস্তি পরিশোধ করে, কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাকি ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আদায়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিটিআরসি আবার নোটিশ দেয়। তারপর কিস্তির আবেদন করে আমরা টেকনোলজিস। ৩৬টি কিস্তিতে এই টাকা দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

একমাস পর ডিসেম্বরে ৮০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্লক করে দেয় বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানটি ফের কিস্তিতে পরিশোধের আবেদন করে। সেবার বিটিআরসি ১০ কোটি টাকা এককালীন দিয়ে বাকি টাকা ১৮টি কিস্তিতে প্রদানের সুযোগ দেয়। এরপরও আমরা টেকনোলজিস আর পাওনা দেয়নি। শেষে বিটিআরসি চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ ব্যান্ডউইথ ক্যাপিং করে দেয়।

ক্যাপিং হলো ডেটার আপস্ট্রিম বা ডাউনস্ট্রিম স্থানান্তর ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ম পরিপালন না করলে শাস্তি হিসেবে ব্যান্ডউইথ ক্যাপিং করা হয়।

এর কয়েকমাস পর চলতি বছরের জুনে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে আমরা টেকনোলজিস জানায়, বিটিআরসির পাওনা ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মধ্যে ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ৩ কিস্তিতে দেবে। আর বাকি টাকা ২৫টি মাসিক কিস্তিতে দেবে। তবে, শর্ত হিসেবে বিটিআরসিকে ক্যাপিং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়।

বিটিআরসি কোম্পানিটিকে পাওনা পরিশোধে সুবিধা দেয়। আমরা কর্তৃপক্ষের দাবির বিপরীতে টাকার পরিমাণ কমিয়ে ৮ কোটি টাকা এককালীন এবং বাকি টাকা ২৫টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ফের কিস্তির আবেদন করে। কোম্পানি ৫ কোটি টাকা এককালীন দিয়ে ব্লক প্রত্যাহার চায় এবং ৪ মাস পর বাকি টাকা ৩৬টি কিস্তিতে দেওয়ার কথা বলে। একইসঙ্গে বিলম্ব ফি মওকূফের আবদার করে।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ক্যাপিং প্রত্যাহারের দাবি করে আমরা টেকনোলজিস। একইসঙ্গে ক্যাপিং প্রত্যাহারের ৬ মাস পর ৪৮টি কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে চায়। সঙ্গে বিলম্ব ফিও মওকুফ চায়।

বিটিআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা টেকনোলজিস টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ আবেদনের সঙ্গে লাইসেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় আনার অনুরোধ করছে। এই চাওয়া বাস্তবসম্মত নয়।’

এসব বিষয়ে আমরা টেকনোলজিসের কোম্পানি সচিব সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, এটা ৭-৮ মাস আগের পুরোনো ইস্যু। এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে পারছি না।’

তাহলে এই সময়ের মধ্যেও কেন পাওনা পরিশোধ করা হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, সেই জবাব এখন আমার আপনার কাছে দেওয়া মুশকিল, সেটাই বোঝাচ্ছি আপনাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top