তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এই শিল্পে কর্মরত আছেন ৪০ লাখের অধিক পোশাক শ্রমিক; যার ৬০ শতাংশ নারী। যারা তৃণমূল থেকে এসে কাজ করছেন। বৃহত্তর এই শিল্প থেকে আগামী ২ বছর পরে অধিকাংশ শ্রমিক বাদ পড়বেন।
কারণ দেশের ৮০ শতাংশ পোশাক কারখানার মালিক অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় মেশিন ক্রয় করার পরিকল্পনা করেছে। নতুন মেশিনে কম খরচে কোম্পানির উৎপাদন বাড়লেও শ্রমিক নির্ভরতা অনেক কমবে। তাই প্রতি ৫ জনের একজন চাকরিযোগ্য হবেন।
বলা হয়েছে, প্রতি মেশিনে ১ থেকে ৬ জন শ্রমিক যুক্ত হতে পারেন। বর্তমানে গড়ে কর্মরত দুই হাজার ২৫০ শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৫০০ জন শ্রমিক এই অটোমেশন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য সূত্রে ২০২৩ অর্থবছরে এই খাতে জিডিপির অবদান ১০. ৩৫ শতাংশ। এই শিল্পে কর্মরত রয়েছেন ৪ মিলিয়নের বেশি বা ৪০ লাখের অধিক পোশাক শ্রমিক। যাদের ৬০ শতাংশই নারী।
আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ পোশাক কারখানার মালিকরা অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় মেশিন ক্রয় করার পরিকল্পনা করছে। এই সময়ে বিগত সময়ের তুলনায় অটোমেশন ১৩ শতাংশর অধিক বৃদ্ধি পাবে। এতে প্রতি মেশিনে ১ থেকে ৬ জন শ্রমিক যুক্ত হতে পারে।
অটোমেশনের অধিক দক্ষতা ও তুলনামূলক কম উৎপাদন খরচের কারণে আগের চেয়ে ২২ শতাংশ উৎপাদন বাড়তে পারে। তবে উৎপাদন বাড়লেও বিপুল সংখ্যক শ্রমিক অটোমেশনে যুক্ত হতে না পারার আশঙ্কা থাকায় এই শিল্পে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়বে।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘ভবিষ্যতমূখী পোশাক শিল্প: টেকসই বৃদ্ধির জন্য অটোমেশন ও শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন লাইটক্যাসল পাটনার্স এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন।
উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশের পোশাক কারখানার ২৬৭ জন কারখানার মালিক, বিদেশী ক্রেতা ও পোশাক শ্রমিকদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল সময়কালীন ঢাকা ভিত্তিক ২০ টি পোশাক কারখানার উপর জরিপ করা হয়। জরিপে বিষয়গুলো উঠে আসে।
এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এপিও) এর ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার গড় লেভেল ৯.২ শতাংশ। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশী শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার গড় হার ৫.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত -এই এক বছরে এই হার কমে ২.২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে একই সময়ে ভিয়েতনামে ৪.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিদক্ষতা ও অটোমেশিনের সমন্বয়ের কারণেই ভিয়েতনামে এটা সম্ভব হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।