সকল মেনু

লোকসানে বহুজাতিক বাটা, মুনাফায় দেশীয় অ্যাপেক্স

দেশের বাজারে জুতার ব্যবসায়ে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুকে পেছনে ফেলেছে দেশীয় প্রতিযোগী অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। জুতাশিল্প খাতে এখন এ দুটি কোম্পানিই একে অপরের বড় প্রতিযোগী। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই–সেপ্টেম্বরে বাটার চেয়ে পৌনে তিন গুণ বেশি ব্যবসা করেছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। তাতে মুনাফা বেড়েছে কোম্পানিটির। অন্যদিকে লোকসান করেছে বাটা শু।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি দুটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাটা শু গত ৩১ অক্টোবর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার একই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গতকাল বুধবার।

তাতে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি ভালো ব্যবসা করেছে। অথচ প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তাদের প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে ২০২ টাকায় নামে, যা আগের দিনের চেয়ে আড়াই টাকা কম। অন্যদিকে লোকসানে পড়া বাটার শেয়ারপ্রতি দাম আগের দিনের চেয়ে ৫ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে ৯১৭ টাকায় উঠেছে।

গত জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার আন্দোলন শুরুর পর বেশ কিছুদিন দেশজুড়ে বিভিন্ন বিপণিবিতান ও কোম্পানিগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র বা শোরুমসমূহ বন্ধ ছিল। এতে তাদের খুচরা ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা সত্ত্বেও জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৪২৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুর পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই তিন মাসে বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স ২৬৯ কোটি টাকা বা প্রায় পৌনে তিন গুণ বেশি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে।

দুই কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের কারণে জুলাই–আগস্টে বিক্রি বা ব্যবসায়ে বড় ধরনের লোকসান হয়। সেপ্টেম্বর থেকে অবশ্য সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোম্পানি দুটি নানা উদ্যোগ নেয়। তাতে আগের দুই মাসের তুলনায় ব্যবসা বাড়ে। তাতে অ্যাপেক্স ভালো ব্যবসা করে। তবে লোকসানের কবল থেকে বেরোতে পারেনি বাটা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১৫৪ কোটি টাকার ব্যবসায় তথা বিক্রিতে বাটার পরিচালন লোকসান হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। সেখানে অ্যাপেক্সের ৪২৩ কোটি টাকার ব্যবসায়ে পরিচালন মুনাফা হয়েছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংকঋণের সুদসহ আর্থিক নানা খরচ ও কর পরিশোধ করতে গিয়ে বাটার লোকসান বৃদ্ধি পায়। একই কারণে অ্যাপেক্সের পরিচালন মুনাফাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে অ্যাপেক্সের মুনাফা দাঁড়ায় ৩ কোটি টাকা। একই সময়ে বাটার লোকসান বেড়ে ১৩ কোটি টাকায় ওঠে।

মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাটা শু তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে বলেছে, জুলাই–আগস্টে দেশে অপ্রত্যাশিত যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো খুচরা পর্যায়ের ব্যবসা বা বিক্রয় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে। এ কারণে পণ্য বিক্রি কমার পাশাপাশি কোম্পানির মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অ্যাপেক্সের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে সেপ্টেম্বরের বিশেষ উদ্যোগ কোম্পানিটিকে জুলাই–আগস্টের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।

২৬% ছাড়ে বিপুল সাড়া

প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ প্রতিষ্ঠাতা দিবস বা ফাউন্ডার ডে পালন করে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। এ দিনটিকে ঘিরে প্রতিবছর নিজেদের সব ধরনের পণ্যে ২৬ শতাংশ মূল্যছাড় দেয় কোম্পানিটি। এ বছর দিনটিতে বৃষ্টি থাকায় মূল্যছাড়ের সুবিধাটি এক দিন বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যাপেক্সের পণ্য ক্রয়ে ২৬ শতাংশ মূল্যছাড় পেয়েছিলেন ক্রেতারা। ফলে এ দুদিনে ভালো ব্যবসা হয় কোম্পানিটির। স্বাভাবিক দিনগুলোতে দেশজুড়ে অ্যাপেক্সের পাঁচ শতাধিক বিক্রয়কেন্দ্র যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তা প্রতিষ্ঠাতা দিবসে ১০–১২ গুণ বৃদ্ধি পায়। এবার দুদিনে ব্যবসা আরও বেশি হয়েছে।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দুদিনের ২৬ শতাংশ মূল্যছাড়ে প্রায় ৪২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে অ্যাপেক্স, যা কোম্পানিটির জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের ভালো ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। এতে ব্যবসা বেড়েছে তাদের।

অ্যাপেক্সের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ফিরোজ মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই–আগস্টে আন্দোলনের কারণে সব মিলিয়ে ২৪ দিন আমাদের বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তারপরও আমরা গত বছরের চেয়ে ভালো ব্যবসা করেছি। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির ফাউন্ডার ডে বা প্রতিষ্ঠাতা দিবসের বিক্রি বড় সহায়তা করেছে। বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি কাঁচামাল ক্রয় ও পরিচালন খরচ কমিয়ে আনতে কয়েক বছর ধরে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। এর কিছুটা সুফল পেতে শুরু করেছে কোম্পানি।’

বাড়তি সুদে বাড়ছে খরচ

দেশে ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় দুই কোম্পানিরই এ খাতে খরচ বেড়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণের সুদ খাতে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের খরচ ছিল ২১ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ এক বছরে ৮ কোটি টাকা বা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।

একই অবস্থা বাটা শুর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাটা শুর সুদ বাবদ খরচ ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই প্রান্তিকে তা বেড়ে হয় ৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

সুদ বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে উভয় কোম্পানির মুনাফায়। এতে মুনাফা কমেছে। এদিকে মুনাফা কমলে শেয়ারবাজারে কোম্পানির মূল্যমানও কমে। তাতে বেড়ে যায় মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও, যা কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top