সকল মেনু

`আমরা ফিড উৎপাদনের দুটি কারখানা করব’

সম্প্রতি কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২২ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে কৃষিবিদ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন পেশাদার কৃষিবিদ ড. আলী আফজাল। একই সঙ্গে তিনি কৃষিবিদ ফিডের পর্ষদ চেয়ারম্যান। গ্রুপের ব্যবসা, পুঁজিবাজারে আসার কারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

  • কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবসা শুরুর গল্পটা জানতে চাই।

পাঁচজন কৃষিবিদ মিলে ২০০০ সালের জুলাইয়ে আমরা ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে ছয় হাজার কৃষিবিদ এর শেয়ারহোল্ডার। বৃত্তের বাইরে এসে আমরা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না থেকেই ব্যবসা শুরু করি। সে সময় দেশে ১ লাখ ৮৬ হাজার কৃষিভিত্তিক শিল্প ছিল। যদিও এর একটিও পেশাদার কৃষিবিদরা প্রতিষ্ঠা করেননি।

টেকনিক্যাল নো হাউ জানা থাকলে ব্যবসায় সুবিধা হয়। দেশের চাষীদের ন্যায্যমূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য পৌঁছে দিতে আমরা ব্যবসায় আসতে উদ্বুদ্ধ হই। কিন্তু তাই বলে আমরা বিনামূল্যে পণ্য দিচ্ছি সেটাও নয়; বরং আমাদের পণ্যের দাম অন্যদের চেয়ে বেশি। তবে আমরা চাষীদের ন্যায্যমূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য দিচ্ছি।

  • গ্রুপের আওতায় আপনাদের কী কী ব্যবসা রয়েছে?

আমাদের মাছ-মুরগির হ্যাচারি রয়েছে। আমরা মাছ-মুরগি ও গবাদিপশুর ফিড তৈরি করি। সব মিলিয়ে আমরা ৬৬ ধরনের ফিড তৈরি করি। মার্কেট শেয়ারের হিসাব করলে আমরা বড় বড় কোম্পানির তুলনায় দ্বিতীয় স্তরে রয়েছি। তবে পণ্যের গুণগত মান হিসাব করলে আমরা সবার ওপরে রয়েছি। এছাড়া লবণ, প্রপার্টিজ, সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিস, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন, ট্রেডিং, কৃষিবিদ বাজার, ওভারসিজ, ক্রপ কেয়ার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসের ব্যবসা রয়েছে।

  • দেশে ফিডের কোয়ালিটি নিয়েও তো প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্যানারির বর্জ্য মিশিয়ে ফিড তৈরি করা হয়।

শুধু ট্যানারির বর্জ্য নয়, নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ শূকরের হাড়ও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মূলত ফিডে প্রোটিন বাড়াতে এগুলো ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রোটিন দেয়াটাই মুখ্য বিষয় নয়। এটি মুরগির ক্ষেত্রে কতটুকু কাজে লাগছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এসব ব্যবহারের কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে নৈতিকতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো দপ্তর থেকে ফিডের মান নিয়ে আমরা কোনো শোকজ পায়নি, বরং প্রশংসা পেয়েছি। কয়েক বছর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাজার থেকে ফিড নিয়ে বিদেশের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে আমাদের ফিডকে সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে বিনা টেন্ডারে ফিড নিয়েছে।

  • প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কৃষিপণ্য রফতানি করা হলে চাষীরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো।

মূল্য সংযোজন ছাড়া চাষীকে বাঁচানো যাবে না। ফলে রফতানি আমাদের করতেই হবে। যেমন কাঁচা মাছের তুলনায় এটি ফিলে করা হলে দেশের বাজারে দাম বেশি পাওয়া যায়। রফতানি করলে লাভ আরো বেশি। সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় প্রতি বছর অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত করা হলে সবজি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এজন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাষীদের সহায়তা দিতে হবে।

  • বর্তমানে আপনাদের কোনো পণ্য রফতানি হচ্ছে কি?

বিদেশে আমরা মাছ রফতানি করছি। আমাদের কিছু ফুড আইটেমও রফতানি হয়। করোনার আগে মালয়েশিয়ায় ফিড রফতানি করেছি। শ্রীলংকা ও নেপালের সঙ্গে কথা হয়েছে। মিয়ানমারেও রফতানির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

  • কৃষিবিদ ফিড পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে?

পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ৫ কোটি টাকা দিয়ে আমরা ব্যাংকঋণ শোধ করব। কোম্পানির নিজস্ব অর্থে মাগুরায় ১০ একর জায়গা আগেই কেনা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে হিলি বন্দরের পাশে আমাদের আট একর জায়গা রয়েছে। এ দুই জায়গায় আমরা দুটি ফিড উৎপাদনের কারখানা করব। কৌশলগত স্থানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী আমরা পণ্য সরবরাহ করতে চাই। এতে আমাদের পরিবহন ব্যয় কমে যাবে। এছাড়া কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও ব্যয় সাশ্রয় হবে।

  • ফিড মিল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

ব্যয় কীভাবে কমানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য আমরা বিকল্প উৎসের সন্ধান করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যয় যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখে চাষীদের মানসম্পন্ন পণ্য তুলে দেয়া। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চাষীদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করার। আমরা চাষীদের মুরগি দেব, ফিড দেব এবং পরামর্শ দেব। আবার এ চাষীদের কাছ থেকেই আমরা মুরগি কিনে নেব। মূলত চাষীদের আমাদের অংশীদার করার মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাই।

  • আপনারা পুঁজিবাজারে আসছেন কেন?

আমাদের শেয়ারহোল্ডার যারা রয়েছেন, তাদের শেয়ার লেনদেনের একটি স্বীকৃত প্লাটফর্ম করে দিতেই আমাদের পুঁজিবাজারে আসা। এছাড়া পুঁজিবাজারে এলে তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। বার্ষিক প্রতিবেদন তো রয়েছেই। গণমাধ্যম ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারিও বেড়ে যায়। এতে কোম্পানি পরিচালনায় স্বচ্ছতা বাড়ে। আমাদের ব্যবসার বয়স ২০ বছর। এ সময়ে আমাদের কোম্পানিতে কেউ বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

গত ২০ বছরে গড়ে আমরা শেয়ারহোল্ডারদের ১৯ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছি। আমাদের ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ৫০০ কোটি টাকার দায় রয়েছে। সামনের তিন বছর কোনো মুনাফা না হলেও আমাদের যে পরিমাণ রিটেইনড আর্নিংস রয়েছে, সেখান থেকে ১২-১৪ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে পারব। সামনে আমাদের সিড, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং ও ক্রপ কেয়ার পুঁজিবাজারে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top