শাহীনুর ইসলাম : দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন নির্বাচিত হওয়ার পরেও এমন উত্থান আসেনি। যদিও ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলতি জুন অর্থাৎ ১৪ মাসে শেয়ারপ্রতি দরে চারগুণ উত্থান হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) হঠাৎ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে দুটি ট্রেডে ৪৪১-৪৪২ টাকায় ৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকায় ৮ লাখ শেয়ার লেনদেন হওয়ার চমক সৃষ্টি করেছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেড (ANWARGALV)। যদিও রেনেটা ১৩২১ থেকে ১৩৩০ টাকায় ১১,৬১০টি শেয়ার ১৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় লেনদেন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার ব্লক মার্কেটে মোট ৩৯টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ১ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার ২৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৯৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
২০২১ সালে ৩০ শতাংশ (২০ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস) লভ্যাংশ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটির হঠাৎ বিপুল পরিমাণে শেয়ার লেনদেন হওয়ায় চমক সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানির মুনাফার চিত্র ধরে এবং বৃহস্পতিবার বিপুল পরিমাণ শেয়ার ব্লকে লেনদেনের চিত্র বিশাল সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছে।
আনোয়ার গ্রুপের ১৮৮ বছরের বাণিজ্যিক পথচলার গৌরবান্বিত চেয়ারম্যান ছিলেন আনোয়ার হোসেন। ১৯৫২ সালে আনোয়ার হোসেন তার পারিবারিক ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেন এবং ৮৩ বছর বয়সে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর একমাস পর ১১ সেপ্টেম্বর গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন বড় ছেলে মানোয়ার হোসেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার আগে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন তিনি।
আনোয়ার গ্রুপ দেশের প্রথম শিল্পোদ্যোক্তা। যার মধ্যে পলিয়েস্টার ফেব্রিক, পিটিএফই টেপ, জিআই ফিটিংস, ইউপিভিসি ফিটিংস, ইলেকট্রিক্যাল কেবল ও সুপার এনামেল কপার ওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দেশের প্রথম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের যাত্রাও শুরু হয় আনোয়ার গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায়।
গ্রুপটির আওতায় বীমা কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অটোমোবাইল, সিমেন্ট, ফার্নিচার, ডাইংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে আছে- এথেনাস ফার্নিচার, এজি অটোমোবাইল, বিডি ফাইন্যান্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক, আনোয়ার টেক্সটাইল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, আনোয়ার সিমেন্ট সিট, এ ওয়ান পলিমার, আনোয়ার সিমেন্ট, আনোয়ার ইস্পাত এবং হোসেন ডাইং।
নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মানোয়ার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পরে ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দরে সর্বোচ্চ গতি পায়।
করোনা পরবর্তীকালেও সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেড। তবে ধারণা করা যায়, সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণার পরে বার্ষিক সাধারণ সভায় রাইট শেয়ারের ঘোষণা আসার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এমন ঘোষণা দিলে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনায় সোহাগা।
মাত্র ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ শেয়ার ধারণকারী কোম্পানিটির আর্থিক চিত্র অনুসারে, তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.১ টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছে ২.৫ টাকা এবং তবে প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা চমকে দেবার মতো ৫.১৩ টাকা। শিগগিরই অ্যানুয়াল রিপোর্ট প্রকাশ হবে।
তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারই সবোচ্চ ইপিএস নিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ৩.৯২ টাকা ইপিএস এবং ১৩.৩১ টাকা এনএভি অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানটি ৩০ শতাংশ লভ্যাশ ঘোষণা করে। ২০২০ সালে ২.০৩ টাকা ইপিএসের প্রতিষ্ঠানটি ১৫ শতাংশ (১০ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস) লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। ২০১৯ ও ২০২০ সালে ১০ শতাংশ করেনগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
তাই বৃহস্পতিবার বিপুল পরিমাণ শেয়ার ব্লকে লেনদেনের চিত্র বিশাল সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছে।
ফান্ডামেটাল কোম্পানি হিসেবে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা, কয়েক বছরের লভ্যাংশ দেয়ার চিত্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ায় ধারণের চিত্র বিশ্লেষন করে সম্ভাবনার কথাই বলছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৪২২ টাকা এবং ২০২১ সালের ১৪ মে ছিল ১১৪ টাকা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।