সকল মেনু

সূচকের ‘বড় পতন’, ‘বাজারের সংস্কার দরকার’

সিনিয়র রিপোর্টার: বড় পতন দিয়ে সপ্তাহ শুরুর পরের দুটি দিন মোটামুটি কাটলেও চতুর্থ কর্মদিবসে আবার সূচকের ‘বড় পতন’ দেখল ঢাকার পুঁজিবাজার। এমন প্রবণতায় হতাশ ডিএসই স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমদ রশীদ লালী। তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারের রিফর্ম (সংস্কার) দরকার।”

ফ্লোর প্রাইসের কারণে দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমা সম্ভব নয়, এমন পরিস্থিতিতেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কমল ১৮ পয়েন্টের বেশি।

বুধবার দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তুলনায় দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা ছিল পাঁচ গুণেরও বেশি। এর মধ্যে লেনদেনও বেড়েছে । ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় চাপ ছিল বেশি।

আবার যেগুলোর দর বেড়েছে, সেগুলোর দর বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু যেগুলো দর কমেছে, শতকরা হারে কমেছে অনেক বেশি।

আগের সপ্তাহে পুঁজিবাজার মোটামুটি স্বস্তিতে ছিল। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া ১৬৯টি কোম্পানির সর্বনিম্ন মূল্য আবার ফিরিয়ে আনার পর শেয়ারদর ও সূচকে কেবল উত্থান হয়নি, লেনদেনও বেড়েছিল।

কিন্তু চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনই ২৫ পয়েন্ট দরপতনে স্পষ্ট হয়, বাজার নিয়ে আস্থা ফেরেনি। সেদিন আবার ইউনিলিভারের শেয়াদরদর ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় একটি কোম্পানিই সূচক বাড়ায় ২৬ পয়েন্ট। তারপরেও সূচকের এমন পতনে নড়বড়ে হয় বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস।

তার পরের দিন ধাক্কা কাটে কিছুটা। সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও লেনদেনের খরা কাটেনি। মঙ্গলবার ফের দরপতন। সেদিন সূচক কমে ১১ পয়েন্ট। তবে লেনদেন দুই দিন পর ছাড়ায় পাঁচাশ কোটির ঘর।

বুধবার শেয়ারদর ও সূচকের পতন হয় আরও বেশি। দর বেড়েছে ২১টি কোম্পানির, হারিয়েছে ১১০টি। ১৮ পয়েন্ট হারিয়ে সূচকের অবস্থান গত ২৭ ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন।

১৭৫টি কোম্পানির শেয়ার এদিন হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে। তবে হাতবদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। আর ৮৪টি কোম্পানির একটি শেয়ারও কেনাবেচা হয়নি।

তবে পাঁচ কর্মদিবস পর লেনদেন ফের ছাড়িয়েছে ছয়শ কোটির ঘর। লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, আগের দিন হাতবদল হয় ৫৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকার শেয়ার।

তবে এর মধ্যেও লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা প্রকট। কেবল ২০টি কোম্পানিতেই হাতবদল হয়েছে ৩৩৫ কোটি টাকা। আর আগ্রহের শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানিতে তা ২৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

অন্যদিকে অনাগ্রহের শীর্ষে থাকা ২৬৬টি কোম্পানি মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে কেবল ৫৪ কোটি টাকা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা অলিম্পিকের শেয়ারের দর বেড়েছে ৬.৩৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আলহাজ্ব টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৩.৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া কেবল চারটি কোম্পানির দর এক শতাংশের বেশি বেড়েছে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর হারানো মেট্রো স্পিনিং মিলস হারিয়েছে ৯.৯৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে প্রায় প্রতি দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা বিজিআইসি হারিয়েছে ৯.৪৭ শতাংশ। আগের দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ইউনাইটেড ক্যাপিটালের কমেছে ৭.৯৫ শতাংশ।

আরও দুটি করে কোম্পানির ৭ শতাংশ ও ৬ শতাংশের বেশি, তিনটি কোম্পানির ৫ শতাংশের বেশি, ১১টি কোম্পানির ৪ শতাংশের বেশি, ১৫টি কোম্পানির ৩ শতাংশের বেশি, ২০টি কোম্পানির ২ শতাংশের বেশি এবং ২০টি কোম্পানি এক থেকে দুই শতাংশ দর হারিয়েছে।

‘বাজারের সংস্কার দরকার’

একদিন বাড়লে দুই দিন পতন, এমন প্রবণতায় হতাশ ডিএসই স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমদ রশীদ লালী। তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারের রিফর্ম (সংস্কার) দরকার।”

তিনি বলেন, “গভর্নেন্স ঠিক করতে হবে। একেবারে বাজে অবস্থায় পড়ে গেছে। ৭ থেকে ৮টা কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা পরিশোধ করছে না। কিছু কোম্পানি তা দিচ্ছে ভেঙে ভেঙে। এটা কোনো কথা? বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাসটা আসবে কোত্থেকে?”

মার্জিন ঋণ, ফোর্সড সেল- এসব বিষয়ে নীতিমালা যুগোপযোগী করা ছাড়া কোনো সমাধান দেখছেন না ডিএসইর সাবেক এই পরিচালক।

তিনি বলেন, “বাজার একটু উঠলেই ফোর্সড সেল চলে আসে। এটাকে আটকাতে পারছে না। ডিএসইর বোর্ডে রিফর্ম আনতে হবে, মার্জিন রেগুলেশন পাল্টাতে হবে।

“ফ্লোর তুলতে পারছেন না এ জন্য যে, ফোর্সড সেল চলে আসবে। একবার ফোর্সড সেল এলে সেটা আসতেই থাকবে। এ বিষয়ে নীতিমালা সুনির্দিষ্ট থাকা দরকার। মার্জিন ঋণের আইনটি ২৫ থেকে ৩০ বছর পুরোনো আইন। এটাকে যুগোপযোগী না করলে হবে না।”

লালী মনে করেন, পুঁজিবাজারে টাকার প্রবাহ শুকিয়ে যায়নি। কিন্তু যাদের টাকা আছে, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস নেই।

তিনি বলেন, “দুই দিন বাড়লে তিন দিন কমে। আবার কোথায় গিয়ে থাকবে, সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই। ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনবেন, কিন্তু বিক্রি করতে পারবে না। এ জন্য বাজার স্বাভাবিক হবে না।”

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকেরও অনেক কিছু করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ডিএসইর সাবেক পরিচালক।

তিনি বলেন, “দর পড়ে যওয়া কোম্পানির শেয়ারদর যখন বাড়ে, তখন কোয়ারি দেয়। যদি বাড়লে চিঠি দেয়, তাহলে যখন কমে, তখন কমল কেন, সে চিঠি কি দেয়?

“আবার চিঠি দিলে কোম্পানি বলে, দাম বাড়তে পারে এমন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কিন্তু কদিন পর ঠিকই কারণ জানায়। তাদের কি ধরেছে?

“আরও সমস্যা আছে, “উনারা বাজারের পরিস্থিতি জানার চেষ্টাও করে না, অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদেরকে ডাকার চেষ্টা করে না, অ্যানালিস্ট রাখে না, রিসার্চ করে না। না থাকলে ওনাদেরকে হেল্প করবে কে?”

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top