স্টাফ রিপোর্টার: মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের দুই মাসের বিল বকেয়া পড়ায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় কর্মরত প্রায় পাঁচশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং দুই স্টক এক্সচেঞ্জের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) কাছে উৎপাদন বন্ধের তথ্য এক মাসের বেশি সময় গোপন রাখে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
তালিকাভুক্তি আইন অনুসারে, কোম্পানির এমন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সেই দিন স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমিশনকে জানাতে হবে। একইসঙ্গে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অবগতির জন্য গণমাধ্যমকেও জানাতে হয়।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় ঢাকা ডাইংকে প্রথমে সতর্ক করা হয়েছিল কিন্তু তারপরও বিল পরিশোধ না করায় গত ২৬ জুলাই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে তিতাস।
এদিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার পর কোম্পানির পণ্য উৎপাদনের ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সে হিসেবে ২৬ জুলাই থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট এক মাস ৯ দিন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষ ৩০ আগস্ট উৎপাদন বন্ধের মূল্য সংবেদনশীল এ তথ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়েছে কোম্পানিটি।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ২৬ জুলাই থেকে তিতাস গ্যাস সাময়িকভাবে ঢাকা ডাইংয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এ কারণে কোম্পানির উৎপাদন ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মতিঝিলের শরিফ ম্যানশনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অফিস অনেকটাই ফাঁকা। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন বলেন, এখানে এই গ্রুপের অন্য তিন কোম্পানির অফিসের কর্মকর্তা রয়েছেন। ঢাকা ডাইংয়ের কথা বলার মতো কোনো কর্মকর্তা নেই। এমডি, চেয়ারম্যান এবং কোম্পানির সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছেন তারা কোম্পানির গাজীপুরের কারখানায় বসেন।
উৎপাদন সম্পর্কে কোম্পানির সচিব আব্দুল্লাহ শিবলীর কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। তারপর একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি আর রিসিভ করেননি।
নাম না প্রকাশের শর্তে সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত উৎপাদন শুরু হওয়ার খবর আসেনি। কী কারণে ২৬ জুলাই উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরও তথ্য দেয়া হয়নি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সব কিছু জেনে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুরে ঢাকা ডাইং কারখানার এক শ্রমিক জানান, গত ২৬ জুলাই থেকে কারখানা বন্ধ। কারখানায় কর্মরত প্রায় পাঁচশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন সম্পর্কে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাজীপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম বলেন, নিয়ম অনুসারে যে কোনো কোম্পানিকে আমরা মাস শেষ হওয়ার পর আরও ৪৫ দিন বকেয়া বিল পরিশোধের সুযোগ দিই। এই কোম্পানির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কোম্পানির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত দুই মাসের বিল বকেয়া রয়েছে। তাই আমরা গ্যাস সংযোগ বন্ধ করেছি।
কোম্পানি সম্পর্কে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানিকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানাতে হয়। যেদিন ঘটনা ঘটে সেদিনই জানাতে হয়। এই কোম্পানির ক্ষেত্রে কি ঘটছে তা দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমিশনকে কেন জানায়নি তা দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির শেয়ারের সংখ্যা ৮ কোটি ৭১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৩টি। কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান মূল্য ১৩ টাকা ২০ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ১ জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ জুন ২০২২ সালে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১৪ পয়সা। তার আগের বছর ছিল ৬০ পয়সা।
© দৈনিক স্টক বাংলাদেশ- ২০২৩
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
ফোন: +৮৮০ ১৭৯৭-৬১১৯৬১, +৮৮০ ৯৬৩৮ ৯৩৫৭৩৬
ইমেইল: info@dailystockbd.com (যোগাযোগের সর্বোত্তম মাধ্যম মুঠোফোন)