স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারে ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড কেমিক্যালস খাতের কোম্পানি গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবসায় দৈন্যদশা দেখা দিয়েছে। গত একবছরে ধুঁকে ধুঁকে চলা কোম্পানিটি স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ (লোন) বৃদ্ধি করলেও টার্নওভার বৃদ্ধিতো করতেই পারেনি উপরন্তু কমেছে। পাশাপাশি লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২২ বিদায়ী বছরে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মিলে মোট ব্যাংক লোন নিয়েছে ৭৪ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৪ টাকা। এর আগের বছর যা ছিলো ৪৭ কোটি ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৫০ টাকা।
অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যাংক লোন বেড়েছে ২৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৪ টাকা বা ৫৮.৩৮ শতাংশ। এদিকে ব্যাংক লোন বৃদ্ধি পেলেও ৩০ জুন ২০২১ এর তুলনায় সদ্য বিদায়ী বছরে (৩০ জুন, ২০২২) টার্নওভার কমেছে ১১ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮৬ টাকা বা ২০.০৬ শতাংশ।
পাশাপাশি একিই সময়ে লোকসান হয়েছে অর্থাৎ লাভের মুখ দেখেনি কোম্পানিটি। সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানির টার্নওভার ছিলো মাত্র ৪৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৪২৫ টাকা; এর আগের বছর যার পরিমান ছিলো ৫৭ কোটি ৯১ লাখ ৪৮ হাজার ১১১ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত বছরে কোম্পানির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯০৯ টাকা। আর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ০.৩৪ টাকা। আর সদ্য বিদায়ী বছরে কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৪ টাকা। আর এ সময় শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ দশমিক ৫৭ টাকা।
শুধু তাই নয়, লোন করে ব্যবসা পরিচালনা করা কোম্পানিটির সদ্য বিদায়ী বছরে নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার (এনওসিএফপিএস) ঋণাত্বক ০.৫০ টাকা। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ০.৫০ টাকা লোন করে কোম্পানিটি তার ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে প্রতিয়মান হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, কোম্পানিটি লোকসানে থাকলেও অফিস এন্ড এডমিনিসট্রেটিভ এক্সপেনসেস কমায়নি উপরন্তু বাড়িয়েছে। ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত বছরে কোম্পানির অফিস এন্ড এডমিনিসট্রেটিভ এক্সপেনসেস ছিল ৪ কোটি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৪২০ টাকা; আর সদ্য বিদায়ী বছরে যা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮২ টাকা। একবছরের ব্যবধানে অফিস এন্ড এডমিনিসট্রেটিভ এক্সপেনসেস বেড়েছে ৮৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৬২ টাকা।
কোম্পানিটির এই বেহাল দশার মধ্যে অফিস এন্ড এডমিনিসট্রেটিভ এক্সপেনসেস বৃদ্ধি করা কতটা যুক্তিসংগত তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এদিকে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাচামাল আমদানি, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, প্ল্যান্ট মেইনটেন্যান্সসহ নানা বিষয়ের জন্য স্বল্পমেয়াদি লোন বৃদ্ধি করে কোম্পানিটি।
গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালসের সচিব খন্দকার আহাদুজ্জামান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে আশানুরুপ পন্য উৎপাদন করতে পাচ্ছি না, তাছাড়া কাঁচামাল আমদানি ব্যয়, শিপিং ব্যায় অনেক বেড়েছে এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। আমরা লোকসানে পড়ে গেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্বল্পমেয়াদি লোন বৃদ্ধি করলেও পণ্যের কাঙ্খিত উৎপাদন ও সেল (বিক্রয়) বৃদ্ধি করতে পারিনি। কোম্পানি লোকসানে পড়েছে। তবে গ্যাসের সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে এই সংকট থেকে অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
বসু ব্যানার্জি নাথ অ্যান্ড কোং চার্টার্ড একাউন্টেন্টস এর পার্টনার দীপক কুমার রয় বলেন, কোম্পানির ব্যাংক লোন বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদি লোন বৃদ্ধি করেও কেন টার্নওভার বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমে গেলো তা অনুসন্ধান করা দরকার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। বিশেষ করে ব্যবসার মুনাফা বৃদ্ধির জন্য কোম্পানিটির সদ্য বিদায়ী বছরে স্বল্পমেয়াদি লোন বৃদ্ধি করেছে ২২ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৮ টাকা।
অথচ এ সময় মুনাফাতো বাড়েইনি বরং লোকসানে পরেছে কোম্পানিটি। ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত বছরে কোম্পানির স্বল্পমেয়াদি লোন ছিল ৪৪ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ টাকা। আর ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি স্বল্পমেয়াদি লোন নিয়েছে ৬৬ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৮ টাকা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।