স্টাফ রিপোর্টার: নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের কেবলমাত্র বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ায় জরিমানা গুণতে হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের চার প্রতিষ্ঠানকে। এ ৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও এবি ব্যাংক লিমিটেড।
অর্থ আইন, ২০১৯ এর আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ১৬ অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। বোনাসের পরিমাণ নগদের চেয়ে বেশি হলে পুরো বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ হবে। আর, নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের কেবল বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ায় ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত আয়করের শাস্তির কবলে পড়তে হচ্ছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড: ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফা হয়েছে ২৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। মুনাফার এ টাকা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে কেবল ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বোনাস শেয়ারের হিসেব অনুযায়িী, শেয়ারহোল্ডারদের ১০৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার বোনাস লভ্যাংশ দেবে কোম্পানিটি। আর, এ টাকার উপর জরিমানা করা হয়েছে ১০ শতাংশ হারে। সেহিসেবে ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে ব্যাংকটিকে।
সেইসঙ্গে, ব্যাংকের ১৮৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রিজার্ভ ফান্ডসহ রিটেইন আর্নিংস রাখা হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড: গেলো অর্থবছরে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৬৫ পয়সা করে। সেহিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মুনাফার এ টাকা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে কেবল ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বোনাস শেয়ারের হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বোনাস লভ্যাংশ দেবে কোম্পানিটি। বোনাস লভ্যাংশের টাকায় পরিশোধিত মূলধন বাড়াবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
আর, নিয়ম অনুসারে মুনাফার ১৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা রাখা হবে ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডে।
ব্যাংকটির বোনাস শেয়ারের ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উপর জরিমানা করা হয়েছে ১০ শতাংশ হারে। এতে ব্যাংকটিকে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড: ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৭৩ পয়সা করে। সেহিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৪১ টাকা। মুনাফার এ টাকা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে কেবল ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানির বোনাস শেয়ারের হিসেব অনুযায়ী, শেয়ারহোল্ডারদের ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ টাকার শেয়ার লভ্যাংশ দিতে হবে। এ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে।
নগদ না দিয়ে কেবল বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ায় বোনাস শেয়ারের ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ টাকার লভ্যাংশের উপর ১০ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ হবে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা গুনতে হবে ওয়ান ব্যাংককে।
এবি ব্যাংক লিমিটেড: ২০২২ সালে সমাপ্ত হিসাববছর প্রতিষ্ঠানটির ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ টাকা মুনাফা হয়েছে। এ মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেবে প্রতিষ্ঠানটি। বোনাস শেয়ারের হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকার বোনাস লভ্যাংশ দেবে কোম্পানিটি।
নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে এবি ব্যাংকের পর্ষদ কেবল বোনাস শেয়ার দেয়ায় ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকার বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
অন্যদিকে, নিয়ম না মেনে মুনাফার ৩০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংকটি। কম লভ্যাংশ ঘোষণা করায় ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে আরো ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ, সবমিলে শাস্তিস্বরুপ ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে ব্যাংকটিকে।