স্টাফ রিপোর্টার: ক্রমে ফ্লোর প্রাইস বা সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে লেনদেনে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দরসীমা ছেড়ে উঠে আসছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। গত সপ্তাহের শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা শেয়ার সংখ্যা কমে ২৩১টিতে নেমেছে। এক সপ্তাহ আগেও এ সংখ্যা ছিল ২৫২টি।
তালিকাভুক্ত শেয়ারগুলোর দরে ওঠানামা পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩৯২টি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারই সাকল্যে ৯টি শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে। এর মধ্যে বুধবার ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হওয়া ১৫টি শেয়ার পরদিন বেশি মূল্যে কেনাবেচা হয়, যার ১২টিই ছিল বীমা খাতের। এগুলো হলো– সেন্ট্রাল, কন্টিনেন্টাল, দেশ জেনারেল, ইস্টার্ন, এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী, মার্কেন্টাইল, ফনিক্স, পূরবী জেনারেল, রিপাবলিক, সেনাকল্যাণ এবং ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স। বাকি তিন শেয়ার হলো– মবিল যমুনা, অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজ ও এবি ব্যাংক।
আবার বিপরীত চিত্রও ছিল। বুধবার ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় বেশি দরে কেনাবেচা হওয়া ৬টি শেয়ার বৃহস্পতিবার দর হারিয়ে ফের ফ্লোর প্রাইসে নামে।
এগুলো হলো– সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিলকো ফার্মা, এনভয় টেক্সটাইল, খুলনা প্রিন্টিং ও সোনালী পেপার। ১০টি শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছিল; কিন্তু নতুন করে নামে ৮টি। মঙ্গলবার ১১টি ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছিল, নামে তিনটি। সোমবার সাতটি ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছিল, নামে ছয়টি। রোববার সাতটি শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে উঠে এসেছিল, বিপরীতে ফের ফ্লোর প্রাইসে নেমেছিল পাঁচটি।
ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে উঠে আসা শেয়ারগুলোর মধ্যে বস্ত্র এবং বীমা খাতের শেয়ার বেশি। স্বল্প মূলধনি ও মৌলভিত্তি বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ছাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিপরীতে সবচেয়ে ভালো শেয়ার হিসেবে বিবেচিত শেয়ারগুলোর ফ্লোর প্রাইস ছাড়ার লক্ষণ কম।
যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছাড়ছে, সেগুলোর বেশ কিছু আবারও ওই দরে নামার নজির দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে সিটি ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এনভয় টেক্সটাইল, গোল্ডেন হারভেস্ট, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, কেয়া কসমেটিক্স, মীর আকতার, ন্যাশনাল লাইফ, প্যাসিফিক ডেনিম, সিলকো ফার্মা, সোনালী পেপার ফের ফ্লোর প্রাইসে নেমেছে। এ ছাড়া ওঠানামার মধ্যে আছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, এনার্জিপ্যাক, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, মবিল যমুনা, রেনউয়িক যজ্ঞেশ্বর।
চলতি মে মাসে লেনদেনের শুরুতে ফ্লোর প্রাইসে শেয়ার ছিল ২৫৬টি। এপ্রিলের শুরুতে এ সংখ্যা ছিল ২৯৫টি। ডিসেম্বরে প্রত্যাহারের পর গত মার্চের শুরুতে ১৬৭টি শেয়ারের ফের ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর গত ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার সংখ্যা বেড়ে সর্বোচ্চ ৩০৪টিতে উন্নীত হয়।
এখনও ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত ৩৫ শেয়ারের ২৯টি ফ্লোর প্রাইসে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টির মধ্যে ২১টি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ২৩টির মধ্যে ১৪টি, প্রকৌশল খাতের ৪২টির মধ্যে ২৫টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২টির মধ্যে ২২টি, বস্ত্র খাতের ৫৮টির মধ্যে ৪০টি, মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৬টির মধ্যে ৩৫টি এবং টেলিযোগাযোগ খাতের ৩টি শেয়ারের সবক’টি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। বীমা খাতের ৫৭ শেয়ারের মধ্যে ৩৭টি ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২১ শেয়ারের মধ্যে ১৬টি, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ১১টির মধ্যে ৯টি এবং বিবিধ খাতের ১৫টির মধ্যে ৯টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে।
ফ্লোর প্রাইস ছাড়া শেয়ারগুলোর মধ্যে গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে হেইডেলবার্গ সিমেন্টের। গত ১৮ এপ্রিলও এর দর ফ্লোর প্রাইস ১৭৯ টাকায় ছিল। লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চার সপ্তাহেরও কম সময়ে প্রায় ৩৫০ টাকায় উঠেছিল।
অবশ্য সর্বশেষ ৩০৪ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। এভাবে উল্লেখযোগ্য দর বৃদ্ধি পাওয়া আরও কিছু শেয়ার হলো– তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, পেপার প্রসেসিং, খান ব্রাদার্স পিপি, সিমটেক্স, মিরাকল, এপেক্স স্পিনিং, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, বিচ হ্যাচারি, সুহৃদ, ইয়াকিন পলিমার, জিবিবি পাওয়ার ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট। তবে বিকন ফার্মার দর এক মাস ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে।
অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে গত বছরের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় সব শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সমালোচনার মুখে গত ২১ ডিসেম্বর ১৬৭ শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিয়েছিল। এতেও রক্ষা না হওয়ায় গত ১ মার্চ ফের ওইসব শেয়ারে ফের ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।