সকল মেনু

সাক্ষাৎকার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে

  • নীতি সুদহার কী?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি (Repurchase Agreement বা Repurchase Option)। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে। নীতি সুদহার বাড়ানো হয় মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। নীতি সুদহার বুঝতে হলে রিভার্স রেপো রেটের আলোচনাও সামনে চলে আসবে। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য আছে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তারল্য তুলে নেয়। এ জন্যও একটি নির্দিষ্ট সুদের হার থাকে। অর্থ তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হার দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে, তাকে বলা হয় রিভার্স রেপো। সাধারণত নীতি সুদহার বা রেপো রেটের তুলনায় রিভার্স রেপোর সুদহার কম থাকে।

  • নীতি সুদহারের সঙ্গে অর্থ সরবরাহের সম্পর্ক কী?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: নীতি সুদহার বেশি থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার এবং রিভার্স রেপোর হার—দুটিই বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধির ফলে নীতি সুদহার এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর রিভার্স রেপোর হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই হারে তারল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ বাজার থাকবে তুলনামূলক শুষ্ক। সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেবে। ব্যাংক ঋণ কম নিলে মানুষও কম ঋণ পাবে। ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকবে। বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকলে জিনিসপত্রের দাম বেশি বাড়তে পারে না।

  • সিদ্ধান্তটি কি সময়োচিত হয়েছে?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। যদিও এতে ব্যাংকগুলোর ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে নীতি সুদহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারি না। যেমন উচিত হচ্ছে এখন ঋণের সুদ বৃদ্ধি করা। কিন্তু একজন গ্রাহকের ক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে সুদের হার আর বাড়ানো যাবে না—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন বাধ্যবাধকতা থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নীতি সুদহার বাড়ায় তখন, যখন মূল্যস্ফীতি বেশি থাকে। বছরের শুরুতে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলে ভালো হতো।

  • ব্যাংকগুলো এখন কী করবে?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় এখন স্বল্পমেয়াদি আমানত সংগ্রহে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এর কোনো বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফার ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদের হার (সিক্সথ মানথস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল-স্মার্ট) নামে একটা বিষয় আছে। এ থেকে ৩ শতাংশ বেশি হতে পারবে না ঋণের সুদের হার।

বর্তমানে স্মার্ট রেট ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে ঋণের সুদ হতে পারবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে গতকালই স্মার্ট রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ঋণের সুদ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে। তবে এ হার আরেকটু বাড়ালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি যেমন ভালো হবে, ব্যাংকগুলোও সুরক্ষা পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top