নেপালও কি শ্রীলঙ্কার পথে?

0
11
শ্রীলঙ্কার মতোই মহামারির কারণে নেপালের পর্যটন খাতে ধস নামে। সংগৃহীত ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট : বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী শ্রীলঙ্কার রপ্তানি পণ্যের ঝুড়ি বেশ সীমিত, একই অবস্থা নেপালেরও। সে তুলনায় উভয় দেশের আমদানি ব্যয়ের পাল্লাই ভারী।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় চরমে মূল্যস্ফীতি, সাম্প্রতিক সময়ে হিমালয়কন্যা নেপালেও মূল্যস্ফীতি নজীরবিহীন মাত্রা ধারণ করেছে। নেপালের অর্থনীতি পতনের ঘূর্ণাবর্তে যেন তেমনভাবেই পড়েছে। ক্রমে ফুরিয়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দেশটির তিনজন সাবেক অর্থমন্ত্রী দ্রুত সরকারি প্রতিক্রিয়ার অভাবে আগামীতে ব্যাপক সংকটের আভাস জানিয়ে সতর্ক করেছেন।

দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যৌথ এই ১২ দফা বিবৃতি দেন- নেপালের কম্যুনিস্ট পার্টির (সিপিএন- ইউএমএল) এই তিন সদস্য- বিষ্ণু পৌরেল, সুরেন্দ্র পান্ডে ও ড. ইয়ুবারাজ খাতিওয়ারা। তারা বলেছেন, কাঠমান্ডু পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

তবে বিরোধীদের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্লেষণকে নাকচ করে দিয়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা জোর দিয়ে বলেছেন, তার দেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো নয়। উৎপাদন ও রাজস্বের দিক থেকেও নেপাল শ্রীলঙ্কার চেয়ে ‘কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে বলে উল্লেখ করেন। শ্রীলঙ্কার মতো বিদেশি দেনার ভারে জর্জরিত না হলেও- তিনি স্বীকার করেন যে, বিলাস পণ্যের আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ টানাটানির মধ্যে পড়েছে।

নেপালের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা অনেকটাই শ্রীলঙ্কার দুর্দশার মতো: ভারতীয় উপমহাদেশের দুই প্রান্তে অবস্থিত – নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু, তারা একই রকম অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংগ্রাম করছে। যদিও উভয় দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে জন্ম নিলেও কিছু বিষয়ে রয়েছে গভীর মিল। যেমন মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পর্যটন খাতে ধস উভয় দেশকেই সংকটের অতল খাঁদের দিকে নিয়ে আসে।

বেশিরভাগ রাজস্ব আয়ের জন্য দুই দেশই বহুলাংশে নির্ভর করে পর্যটন খাতের ওপর। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নেয়- অর্থনৈতিক সংকট তারই ফলশ্রুতিতে দেখা দেয়। অন্যদিকে, গেল বছর সবচেয়ে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল সময় পার করে নেপাল, যা দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে ভূমিকা রাখে।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী শ্রীলঙ্কার রপ্তানি পণ্যের ঝুড়ি বেশ সীমিত, একই অবস্থা নেপালেরও। সে তুলনায় উভয় দেশের আমদানি ব্যয়ের পাল্লাই ভারী।

ব্যবসা-বানিজ্যকে প্রণোদনা দিতে উল্লেখযোগ্য কর কর্তনের নীতি নিয়েছিল রাজাপাকসের সরকার। এভাবে রাজস্ব আয় কমার পরই সংকট দেখা দিতে থাকে। রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করে পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েও কলম্বো আরেকটি বড় ভুল করে। এতে ফলন কমে যায় এবং তার ফলে চায়ের মতো প্রধান রপ্তানিও হ্রাস পায়। রপ্তানি থেকে আয় কমতে থাকায় সরকার পরে নিদারুণ অর্থকষ্টে, এক পর্যায়ে নিত্যপণ্য আমদানির মতো যথেষ্ট টাকার ঘাটতি দেখা দেয়।

২০২১ সালের জুলাইয়ে কেপি শর্মা ওলি নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঘাটতি দেখা দিতে থাকে, যা দেশে রাজনৈতিক গোলযোগের জন্ম দেয়। এসময় কোভিড লকডাউনের কারণে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রেমিট্যান্স ও পর্যটন খাত থেকে আয় কমে আসতে থাকলে পরিস্থিতি আরও দ্রুত খারাপের দিকে চলে যায়। ২০২১ সালের মধ্য জুলাইয়ে নেপালের ফরেক্স রিজার্ভ ছিল ১১.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৭৫ কোটিতে।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক- নেপাল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র গুনাকর ভট্ট বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, “আমরা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে উৎকণ্ঠিত।”

বিনিয়োগ সংস্থা উইন্ট ওয়েলথের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা আনশুল গুপ্তা বলেন, অর্থনীতির ধসের মধ্যেই তারল্য সংকটের মুখে পড়ে নেপাল। এর অন্যতম প্রধান কারণ, ব্যাংকে আসা আমানতের চেয়ে ছাড়কৃত ঋণের সুদহার দ্বিগুণ।

“মহামারির পর ব্যাংকের আমানত: ঋণের অনুপাত ৮৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা হয়। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ নেপালি রুপি আমানতে আগের ৮৫ রুপির চেয়ে ব্যাংক থেকে ৯০ রুপি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে আমানত ও ঋণের ভারসাম্য ব্যাহত হয়। একদিকে ঋণ বাড়তে থাকে, কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি আমানত”- ব্যাখ্যা করেন তিনি।

“আমানত বাড়াতে পরে ব্যাংকগুলো প্রদত্ত সুদহার বাড়ায়, কিন্তু আমানত প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হয়নি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here