শাহীনুর ইসলাম : বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে বেশি গুরুত্ব দিয়ে রোববার বসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন। একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে ৯ জুন উপস্থাপন করা হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট।
রোববার বিকেল পাঁচটায় সংসদের বৈঠক বসে। গত ১৮ মে এ অধিবেশন ডাকেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
করোনাভাইরাসের অতিমারির পর দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার তিনটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে পদক্ষেপ -এই তিনটি বিষয় বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এই বিনিয়োগে টানতে করের বোঝা না চাপিয়ে এর আওতা বাড়বে নতুন বাজেটে। আর এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
এবারের বাজেট গতানুগতিক ধারার কোনো বাজেট নয়। বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তিনটি বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকেও অধিক গুরুত্ব দিয়ে বসছে বাজেট অধিবেশন।
করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্ট সংকট দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ জরুরি।
তাই নতুন বাজেটে মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। যার ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেসরকারি খাত এবং ৬ দশমিক ৬ শতাংশ আসবে সরকারি খাত হতে আসবে। যদিও গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগের গড় হার ঘুরপাক খাচ্ছে সেই ২৩-২৪ শতাংশেই।
এবার দারিদ্র্য বিমোচনে সেই বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ উদ্যোগ রাখবে।
এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এবারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যকে পুনরুদ্ধার করার বিস্তারিত পদক্ষেপ থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। অর্থবছরের পুরো সময়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। কভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজন, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহ নির্মাণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ বাড়ানো হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, `জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট হবে সরকারের অতীতের অর্জন ও উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। এবারের বাজেটে বেশকিছু বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব রাখা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক চিত্র থেকে এটি সহজেই প্রতীয়মান হয় যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সময়োপযোগী ও কার্যকর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা, কভিড-১৯ প্রতিষেধক টিকা প্রদান কার্যক্রমের মাধ্যমে করোনা মহামারীর চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের অর্থনৈতিক প্রভাবও সফলভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
আমি বিশ্বাস করি ‘এভরি চ্যালেঞ্জ ক্রিয়েটস লটস অব অপরচুনিটিস অ্যান্ড উইন্ডোজ ফর মুভিং ফরোয়ার্ড’। সে কারণে কভিড-১৯-এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্ট ক্ষতের পাশাপাশি কিছু সুযোগও তৈরি হবে, যা গ্রহণে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ।
সংগত কারণেই কভিড-১৯-এর প্রভাব বিবেচনায় এবারের বাজেটে প্রাধান্য পাবে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা। দেশের সব মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমেই মূলত অর্জিত হবে ২০৩০, ২০৩১, ২০৪১ ও ২১০০-এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো, বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থাৎ বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
নতুন বাজেটে মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। যার ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেসরকারি খাত এবং ৬ দশমিক ৬ শতাংশ আসবে সরকারি খাত হতে। যদিও গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগের গড় হার ঘুরপাক খাচ্ছে সেই ২৩-২৪ শতাংশেই।
শ্রমশক্তি জরিপ থেকে দেখা যায় প্রতিবছর দেশে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে কর্মসংস্থান কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাম্প্রতি এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ২০২২ সালে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বেকার। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জকে মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে।
করোনার আঘাতে গত দুই বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৩ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দারিদ্যসীমার নিচে চলে গেছে। ২০১৯ সালে দেশে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, বর্তমানে তা ৪০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে।
আসন্ন বাজেটে তাই দারিদ্র বিমোচনে বরাদ্দ বাড়বে। আয় বৈষম্য কমাতে শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির তাগিদ দেন অর্থনৈতিক খাত সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রস্তুত হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট।