সকল মেনু

নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, বরখাস্ত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা

সিনিয়র রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তার শাস্তি মওকুফের আপীল আবেদন বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভা। তাদের আপিল নাকচ হওয়ায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হতে পারেন তারা।

দুই কর্মকর্তা হলেন- যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী ও আবদুল্লাহ আল মাবুদ।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪২২তম পর্ষদ সভায় দুই কর্মকর্তার আপিল আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়। সভায় ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রিজার্ভ চুরির মামলার অগ্রগতি বিষয়টি পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হলে পরবর্তীতে আলোচনার জন্য রাখার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ সব খবরের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬টি শূন্য পদের ২০২০ সালের পরীক্ষা নেওয়া হয়। সে সময় আলমাছ আলী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সেই সুযোগে পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় আসন কোথায় পড়বে এবং ভাইভা বোর্ডে কারা থাকবেন, তা নিয়ম ভঙ্গে আবেদনকারীকে জানাতেন তিনি।

এমনকি আলমাছ আলী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ মৌখিক পরীক্ষায় তদবিরও করতেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয় তদন্ত করে অনিয়ম পাওয়ায় আলমাছ ও মাবুদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬টি শূন্য পদের জন্য ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও করোনার কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়। এরপর গত বছরের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

৭০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ১৪২ জন। উত্তীর্ণ হয় ২১ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় গত বছরের ৬ জানুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাইকালে আবু বকর সিদ্দিক নামে এক পরীক্ষার্থীর হাতের লেখার গরমিল ধরা পড়ে।

লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নিজের হাতের লেখার মিল না থাকায় আবু বকর সিদ্দিককে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, তার পক্ষে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়েছেন। এরপর ১৩ জানুয়ারি বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, আবু বকর সিদ্দিকের বদলে নেত্তানন্দ পাল নামে একজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় এমন অনিয়মের পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ। আর আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল্লাহ আল মাবুদের সঙ্গে নেত্তানন্দ পালের যোগাযোগ করিয়ে দেন অপর যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী।

এ জন্য আলমাছ আলীর হিসাবে দুই লাখ টাকা জমা দেন আবু বকর সিদ্দিক। নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে দুই যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।

এছাড়া ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তিনটি ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার এবং একই সঙ্গে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের একজনের সাথে সঙ্গে আলমাস আলীর যোগাযোগ থাকার তথ্য পাওয়া যায়।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে ঢাকার বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর এজাহারে ২২ নম্বর আসামি আলমাছ আলীর নাম রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top