স্টাফ রিপোর্টার : ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্রোকারেজ হাউস পিএফআই সিকিউরিটিজের মালিক এম এ খালেক ও তার ছেলে ফারইস্ট ফাইন্যন্সের সাবেক পরিচালক রুবাইয়াত খালেদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল মাজেদ বাদী হয়ে কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পিএফআই সিকিউরিটিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চারুশীলের মালিক সেলিম আহমেদের নামে ফারইস্ট ফাইন্যান্স থেকে দশ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন। পরে দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি আট কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। সুদ ও আসলে বকেয়া টাকার পরিমাণ ৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। দুদক আইন অনুযায়ী, সুদ-আসলের এই টাকা আত্মসাতের পর্যায়ে পড়ে।
দুদক সূত্র জানায়, গত ২০১৪ সালে পিএফআই সিকিউরিটিজ চরম আর্থিক সংকটে পড়ে যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল তখন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পিএফআই সিকিউরিটিজের মালিক এম এ খালেক ও তার ছেলে রুবাইয়াত খালেদ গোপনে পরিকল্কপ্পনা তৈরি করে তাদেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চারুশীলের ব্যবসা সম্প্রসারনের নামে ফারইস্ট ফাইন্যান্সে ঋণের আবেদন করিয়েছেন।
ওই আবেদন পাস হওয়া ও ঋণের অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত এম এ ওয়াহাবকে তাদের অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। তখন এম এ ওয়াহাব পিএফআই সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্বে ছিলেন। পিএফআই সিকিউরিটিজের মালিক ও তার ছেলে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কৌশলে ম্যানেজ করেছিলেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, মেসার্স চারুশীলের নামে ঋণ নিয়ে পিএফআই সিকিউরিটিজ এই ঠিকাদারি কোম্পানির মাধ্যমেই দুই কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এ সংক্রান্ত ব্যাংকের চেক, নথিপত্র দুদকের কাছে রয়েছে।
এম এ ওয়াহাব ও সেলিম আহমেদ মৃত্যুবরণ করায় তাদেরকে বাদ দিয়ে ওই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালক এম এ খালেক, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবেক পরিচালক রুবাইয়াত খালেদ, পিএফআই সিকিউরিটিজের এমডি কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পিএফআই সিকিউরিটিজের উপমহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিব মো. মুসফিকুর রহমান, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি শান্তনু সাহা, সাবেক ডিএমডি ও চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসএভিপি ও হেড অব ফাইন্যান্স (এইআর) মো. আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র ম্যানেজার মনোরঞ্জন চত্রক্রবর্তী, ক্রেডিট ইনচার্জ মোহাম্মদ রফিকুল আলম, সিনিয়র ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম ও এসএভিপি ও কোম্পানি সচিব শেখ খালেদ জহির।
পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালক এম এ খালেক ও তার ছেলে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবেক পরিচালক রুবাইয়াত খালেদ পুলিশের সিআইডির এক মামলায় বর্তমানে জেলে আছেন।
মেসার্স চারুশীলের স্বত্ত্বাধিকারী প্রয়াত সেলিম আহমেদ দশ কোটি টাকার ঋণের জন্য ফারইস্ট ফাইন্যান্সে আবেদন করেছিলেন ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই কোম্পানিকে একটি চেকে ঋণ হিসেবে দশ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলিম আহমেদ ওই দশ কোটি টাকা পাওয়ার পরের দিন পাঁচ কোটি করে দুটি চেকে পিএফআই সিকিউরিটিজকে দশ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
ফারইস্ট ফাইন্যান্স থেকে মেসার্স চারুশীলের নামে ঋণ গ্রহণ আবার চারুশীল থেকে ঋণের পুরো টাকা পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, এসবই ওই তিন প্রতিষ্ঠানের ওই সময়কার শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হয়েছে বলে অভিযোগ। অর্থ আত্মসাতে মেসার্স চারুশীল, পিএফআই সিকিউরিটিজ ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ওইসময়ের কর্তা ব্যক্তিদের যোগসূত্র অনেকটাই স্পষ্ট।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।