Homeখাতওয়ারী সংবাদক্রিকেটার সাকিবের পার্টনার হিরুর স্ত্রীসহ কয়েকজনকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা

ক্রিকেটার সাকিবের পার্টনার হিরুর স্ত্রীসহ কয়েকজনকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা

সিনিয়র রিপোর্টার: বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের (বিএনআইসিএল) শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ব্যবসায়িক পার্টনার ও মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী ও সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানসহ কয়েকজনকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় কাজী সাদিয়া হাসানসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিএনআইসিএলের শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিএসইসি জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত অন্যান্যরা হলেন- সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী মো. এ জি মাহমুদ, একই ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী তার ভাই মো. সাইফ উল্লাহ ও ডিআইটি কো-অপারেটিভ।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ সেকশন ১৭(ই)(৫) ভঙ্গ করার জন্য কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া একই কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) ভঙ্গের দায়ে সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা, এজি মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা ও ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এর আগেও আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী মো. এ জি. মাহমুদ, একই ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী ও তার ভাই মো. সাইফ উল্লাহ এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। তারা সবাই শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্টে আইপিডিসি, বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সু, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে আবুল খায়ের হিরু, তার সহযোগী হিসেবে স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান, তার কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং, ডিআইটি কো-অপারেটিভ এবং দেশ আইডিয়াল ট্রাস্টকে মোট ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

এর মধ্যে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে কাজী সাদিয়া হাসান ও তার স্বামী হিরো যৌথভাবে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত  ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা মুনাফা করেন। তাই চলতি বছরের ২০ জুন কাজী সাদিয়া হাসানসহ তার সহযোগীদের ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একইভাবে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে কাজী সাদিয়া হাসান ও সহযোগীরা গত বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ২ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মুনাফা করেন। তাই চলতি বছরের ২০ জুন বিএসইসি কাজী সাদিয়া হাসান ও তার সহযোগীদের ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করে।

এদিকে, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা এবং একই ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী ও তার ভাই মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ফিড মিলসের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে এজি মাহমুদকে ৩ কোটি টাকা ও সাইফ উল্লাহকে ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আর ডিআইটি কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের হিরো এবং কোষাধ্যক্ষ কাজী সাদিয়া হাসান। প্রতিষ্ঠানটি ও তার সহযোগীরা কারসাজির মাধ্যমে এ বছরের ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম বাড়িয়ে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মুনাফা করেন। এ কারসাজির অভিযোগে চলতি বছরের বছরের ২ আগস্ট ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও এর সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের বাজারচিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ছিল ৪৬.১০ টাকা। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৬ মে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৯.৩০ টাকা। ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩.৮০ টাকায়। তবে ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার ৮৫৯ শতাংশ বেড়ে ১৬৩.৮০ টাকায় দাঁড়ায়। গত দুই বছরের ভেতরে এই সময় কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে এগুলোর শেয়ারের দাম ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০২০ সালে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের হঠাৎ উল্লম্ফনের মূলহোতা হিসেবে হিরু ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের নাম আলোচনায় আসে।

এ বিষয়ে জানতে মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত