স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যাংকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হামদুল ইসলামকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজার থেকে নিষিদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের অযাচিত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য ২৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।
বিএসইসির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হামদুল ইসলামের আত্মীয়রা তাদের সুবিধাভোগী মালিকের (বিও) অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না এবং জরিমানা সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত শেয়ার স্থানান্তর করতে পারবে না।
তবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো আদেশ জারি করা হয়নি বলে বিএসইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, হামদুল ইসলাম বিভিন্ন কোম্পানির সুবিধা নেন- যেখানে তিনি ইস্যু ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করেন। ওই সব কোম্পানির প্রাক-আইপিও শেয়ার তার আত্মীয় ও স্ত্রীর নামে রেখেছেন তিনি। সেইসঙ্গে, কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটিকেও তিনি সহযোগিতা করেননি।
এর আগে ২০১৪ সালের শুরুতে, তাল্লু স্পিনিং মিলস লিমিটেড এবং বাঙ্গাস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী সাইফুর রহমানকে পাঁচ বছরের জন্য শেয়ার বাজারের সমস্ত কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছিল বিএসইসি। পাশাপাশি, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল তাকে।
হামদুল ও তার পরিবারের ২৬ কোটি টাকা জরিমানার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, হামদুল ইসলামকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
হামদুলের শ্যালক কাজী এমদাদুল হককে ৪ কোটি টাকা এবং শ্বশুর আবদুস সুলতানকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া হামদুলের বোন হুসনে আরা বেগমকে ৩ কোটি টাকা, ভাই সাইফুল ইসলামকে ৪ কোটি টাকা এবং স্ত্রী শাহিদা আরাবিকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সামনে এসব আত্মীয়-স্বজন কোনো ধরনের সহযোগিতা বা তথ্য নিয়ে আসেনি বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্ত অনুযায়ী, হামদুল ইসলামের ফার্মটি যেসব কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার ছিল, ওইসব কোম্পানির প্রায় ৩৪.৪৯ লাখ প্রাক-আইপিও শেয়ার রয়েছে হামদুলের পরিবার ও আত্মীয়দের নামে। এ ক্ষেত্রে পাবলিক ইস্যু বিধি লঙ্ঘন করে মুনাফা অর্জন করেছে হামিদুলসহ তার পরিবার ও আত্মীয়রা।
প্রাক-আইপিও শেয়ারের মধ্যে হামদুলের স্বজনদের কাছে নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেলে ৫ লাখ ২০ হাজার, বিবিএস ক্যাবলসে ১০ লাখ, সি পার্ল বিচ রিসোর্টে ২ লাখ এবং থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনে ১৭ লাখ ২৯ লাখ শেয়ার রয়েছে।
হামদুলের স্ত্রী শাহিদা আরাবি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিটের ৫.২ লাখ শেয়ার কিনেছেন।
তার শ্বশুর আবদুস সুলতান কিনেছিলেন বিবিএস ক্যাবলসে ৪ লাখ, থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনে ৬ লাখ ৬২ হাজারসহ সি পার্ল রিসোর্টের দুই লাখ শেয়ার।
শ্যালক কাজী এমদাদুল হক বিবিএস ক্যাবলসে ৩ লাখসহ থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনে ৬ লাখ ৫ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন।
হামদুলের বোন থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনের ৪ লাখ ৬২ হাজার শেয়ার এবং ভাই সাইফুল ইসলাম বিবিএস ক্যাবলসে ৩ লাখ শেয়ার কিনেছিলেন।
পাবলিক ইস্যু রুলসের অধীনে, ইস্যু ম্যানেজার বা তার সহযোগীরা কোনোভাবেই প্রি-আইপিও শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। হামদুল ইসলাম নিয়ম ভঙ্গ করেছেন বলে জানায় বিএসইসি।
উল্লেখ্য, ব্যাংকো ফাইন্যান্সের সাধারণ পরিচালক ব্যাংকো সিকিউরিটিজ, ২০২১-এর জুনে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
বিএসইসির অনুসন্ধান অনুযায়ী, গ্রাহকদের কাছ থেকে ৬৬.৫৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ব্রোকারেজ হাউসের মালিকরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।