Homeবিশেষ সংবাদউৎপাদন বন্ধ এপেক্স উইভিংয়ের, সঙ্গে পুঞ্জীভূত লোকসান

উৎপাদন বন্ধ এপেক্স উইভিংয়ের, সঙ্গে পুঞ্জীভূত লোকসান

স্টাফ রিপোর্টার: শেয়ারমার্কেটের এসএমই বোর্ডে (স্বল্প মূলধনি কোম্পানির প্লাটফর্ম) তালিকাভুক্ত কোম্পানি এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের কারখানায় ২০২১-২২ হিসেব বছরের পুরো সময় ধরেই বন্ধ ছিল উৎপাদন। একই সময়ে পণ্য বিক্রি থেকে কোনো আয় হয়নি কোম্পানিটির।

দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়নি কোম্পানির অতি গুরুত্বপূর্ণ এ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য। ২০২১-২২ হিসেব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছেন কোম্পানিটির নিরীক্ষক।

সূত্র অনুযায়ী, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসেব বছরে  কোনো আয় দেখায়নি এপেক্স উইভিং। পাশাপাশি, এ সময়  কোনো কিছু কেনাও হয়নি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ ছিল বলে  কোম্পানি- ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে জানায়। এ সময়  আগের বছরের মজুদ পণ্য দেখিয়েছে কোম্পানিটি।

অন্যদিকে, বর্ণিত সময়ে কোম্পানির কারখানায় গ্যাস এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে। আর, এর বিপরীতে বিলও খুঁজে পেয়েছেন কোম্পানিটির নিরীক্ষক।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে  জানায়, তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কিত পক্ষ আলোচ্য সময়ে কারখানা ব্যবহার করেছে। যদিও এ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তিপত্র দেখাতে পারেনি কোম্পানিটি।

এপেক্স উইভিংয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হলেও  কারখানায় কোনো উৎপাদন, বিক্রি ও কেনা-কাটা হয়নি কেন, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কোম্পানিটি। পাশাপাশি, আর্থিক প্রতিবেদনে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ যে পরিমাণ অর্থ দেখিয়েছে কোম্পানিটি, তার সঙ্গেও তিতাস গ্যাস ও ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলের তথ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়েও কোম্পানিটি কোনো জবাব না দিয়ে কারখানার বর্তমান অবস্থা ও মজুদ সম্পর্কে যাচাইয়ের জন্য নিরীক্ষককে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যেকারণে, বিষয়গুলোর সত্যতাও যাচাই সম্ভব হয়নি নিরীক্ষকের।

কারখানা বন্ধ ও বিক্রি না হওয়ার বিষয়ে মূল্যসংবেদনশীল তথ্য না থাকা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাবে কোম্পানিটির সঙ্গে সম্পর্কিত পক্ষের মধ্যে সংঘটিত লেনদেন, ব্যাংক বিবরণী, পাওনা বিল, পাওনাদারদের তথ্য যাচাই করতে পারেনি নিরিক্ষক। একইসঙ্গে, সম্পদের যথার্থতা, মজুদ পণ্য, আয়কর, আমদানি পত্রের দায়ের মতো বিষয়গুলোও যাচাই সম্ভব হয়নি।

কোম্পানিটি ২০০৯ সাল থেকেই লোকসানের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক। নিরীক্ষকের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫১ কোটি টাকা। আর, যন্ত্রপাতি ভেঙে যাওয়ার কারণে ২০২১-২২ হিসেব বছরে কোম্পানির লোকসান হয়েছে  ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ অবস্থায়, ব্যাংকের কাছ থেকেও চলতি মূলধন সহায়তা পাচ্ছে না কোম্পানিটি।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার মতো বিষয়গুলো ভবিষ্যতে কোম্পানিটির টিকে থাকার প্রশ্নে বড় ধরণের শঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষক। নিরীক্ষককে যৎসামান্য নথিপত্র  দেয়া হলেও তথ্য-ঘাটতির কারণে তার যথার্থতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যেকারণে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম এবং প্রস্তুত করা আর্থিক বিবরণীর বিষয়ে  কোনো সঠিক ফলাফলে আসতে পারেনি কোম্পানির নিরীক্ষক।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, নিরীক্ষকের মতামতসহ আর্থিক প্রতিবেদন কমিশনের কাছে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেগুলো কমিশনে আসার পর  সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করার পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার থাকলে তা এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ারমার্কেটে ১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত এপেক্স উইভিং  প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ না দেয়ায় ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তরিত হয় কোম্পানিটি। পাশাপাশি, ১১ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উন্নতি হয়নি। গত বছর কোম্পানিটিকে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই বোর্ডে লেনদেনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত