সকল মেনু

মঙ্গলবার এজিএম, ঘুরে দাঁড়াবে কি ইউনাইটেড এয়ার!

হোসাইন আকমল: অধুনা লুপ্তপ্রায় বেসরকারি এয়ার কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ৬ বছর পর আহ্বান করেছে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। কোম্পানিটির এজিএম মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারী/২০২৩) অনুষ্ঠিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটির কার্যক্রম প্রতিষ্ঠার ৯ বছরের মাথায় ২০১৪ সালে বন্ধ করে দেয়। এরপর আবার চালু হলেও ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালনা পর্ষদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে শত কোটি টাকার ক্রমবর্ধমান লোকসানে মুখ থুবড়ে পড়ে কোম্পানিটি। কোনো ঘোষণা ছাড়াই একই বছরের (২০১৬) মার্চে কোম্পানির সমস্ত অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার স্থগিত করা হয়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানির ২০১৪ সালে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে শেষ চেষ্টা হিসেবে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এর আগে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী কোম্পানির কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে একটি বোর্ড গঠন করেছিল বিএসইসি। এরপর, ৪ মার্চ বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক ও বিমান বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলমসহ আট সদস্যের একটি স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেয় বিএসইসি। একইসঙ্গে, অপসারণ করা হয় কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আলম চৌধুরীকে।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকার দায়বদ্ধতায় ডুবে আছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে সারচার্জসহ ৩৫৫ কোটি টাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বা ক্যাবের (CAAB) পাওনা। বাকি দায়ভার ব্যাংক ও অন্যান্য উৎসের কাছে।

এয়ারলাইনটিকে পুনঃসচল করার পিছনে প্রধান বাধা ক্যাবের (CAAB) সারচার্জ। প্রতিষ্ঠানটিকে জিইয়ে রাখতে সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।

ইউনাইটেড এয়ারের কাছে পাওনা সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অফ বাংলাদেশের (CAAB) বিপুল পরিমাণ সারচার্জ মওকুফ করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এয়ারলাইনটিকে একটি কার্গো অপারেটর হিসাবে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। এটিকে কার্গো ক্যারিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে নতুন ক্লায়েন্টরা যোগাযোগ করেছিল। পাশাপাশি, কোম্পানির পুরনো বিমান বিক্রি করে নতুন কার্গো বিমান কেনার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সারচার্জের কারণে ক্লায়েন্টরা বিমুখ হয়। মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত করতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্‌বান জানিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী।

বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, এয়ারলাইনটি যারা কিনবেন, সারচার্জ বাদ দিয়ে ক্যাবের কাছে এয়ারলাইনটির মূল বকেয়া (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) তারা পরিশোধ করবেন।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, এটা ভালো খবর যে প্রধানমন্ত্রী সারচার্জ মওকুফের উদ্যোগ নিয়েছেন।

বিএসইসি তথ্যানুসারে, এয়ারলাইনটি ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণ- তাদের কাছে বর্তমানে কয়েকটি অব্যবহৃত বিমান ছাড়া কিছুই নেই।

তথ্যে আরো জানা যায়, ক্যাবের বকেয়া নীট পাওনা প্রায় ৫৬.৮৭ কোটি টাকা। -যার মূল্য সংযোজন কর ৫.৬৫ কোটি এবং আয়কর ২ লাখ টাকা। আার, অবশিষ্ট ২৯২.৮১ কোটি টাকা বার্ষিক ৭২ শতাংশ হারে সারচার্জ হিসাবে গণনা করা হয়েছিল। চক্রবৃদ্ধি সারচার্জ পদ্ধতির কারণে ঋণ ফুলে-ফেঁপে যাচ্ছে প্রতি বছর।

সম্প্রতি ২০১২ থেকে ২০২১ অর্থবছরের জন্য ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

দেশের একমাত্র উড়োজাহাজ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১০ সালে শেয়ারমার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ২০১৬ থেকে ২১ পর্যন্ত টানা ৬ বছর এজিএম করতে পারেনি।

স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিং অনুসারে, বুধবার (১৪ ডিসেম্বর/২০২২) কোম্পানিটি ৬ বছরের মুলতবী এজিএমগুলো করার অনুমতি পেয়েছিল হাইকোর্ট থেকে। আর, এ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা ছিল গত ২২ ডিসেম্বর।

এর আগে, ওই বছরের মার্চ মাসে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬ বছরের মুলতবি এজিএম নিয়মিতকরণসহ কোম্পানিটিকে অডিট সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি।

কোম্পানির ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারিতে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠানো হয় ইউনাইটেড এয়ারকে।

তথ্যানুসারে, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০১০ সালে প্রাথমিক গণ-প্র্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এরপর, ২০১১ সালে জারি করে রাইট শেয়ার।

পর্ষদের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ঋণভারে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর একসময় ২ টাকার নিচে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এমন দুরবস্থা। যদিও এর প্রায় ৯৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারী। এতে প্রায় হাওয়া হয়ে যায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি।

ওটিসি মার্কেটের এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ৩ জানুয়ারী সর্বশেষ দর বা ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top