সকল মেনু

ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ-সীমা নির্ধারণ, এমডির পদত্যাগপত্র জমা

স্টাফ রিপোর্টার: ঋণ বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে  ন্যাশনাল ব্যাংককে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকার সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ, ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পারবেনা প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি, নগদ না আদায় করা পর্যন্ত পুরোনো ঋণ নবায়ন না করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে ২২ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, গত মে মাসেও অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ঠেকাতে ওই প্রতিষ্ঠানকে একই ধরণের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সমঝোতা স্মারকের যথার্থ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেগুলেটরি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, এখন থেকে কৃষিঋণ, চলতি মূলধন ও সিএমএসএমই ঋণ(সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত), ভোক্তা ঋণ (গৃহ নির্মাণ ঋণ, রিটেইল ক্রেডিট, ক্রেডিট কার্ড, এসওডি ইত্যাদি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ঋণ, শতভাগ নগদ মার্জিনের বিপরীতে ঋণপত্র এবং অন্যান্য পরোক্ষ ঋণসুবিধা ছাড়া অন্য কোনো ঋণসুবিধা দেয়া যাবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ বা সীমাতিরিক্ত বকেয়া স্থিতি নগদ আদায় করা ছাড়া গ্রাহকের বিদ্যমান ঋণসুবিধাও নবায়ন করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেন ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি  পদত্যাগপত্র জমা দেন। একই কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে অফিস করছেন না তিনি। তবে, চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেহমুদ হোসেনের এমডি পদের মেয়াদ ছিল।

জানা যায়, নানা অনিয়মে গত দুই বছর ধরে সংকটে আচ্ছন্ন ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকের পরিচালকরা পছন্দের গ্রাহকদের ঋণ দিতে আগ্রহী থাকায় ঋণের বিষয় জোর করে পর্ষদে তোলেন হরহামেশাই। এসবের বিরোধিতা করায় পর্ষদের প্রভাবশালী দুই পরিচালকের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না মেহমুদ হোসেনের। যেকারণে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

আবার, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াসহ নানা সংকটের মধ্যেও চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের সুদ (সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা) মওকুফ করে ন্যাশনাল ব্যাংক। এরফলে ব্যাংকটির তারল্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।

একই কারণে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) অর্থ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিল ব্যাংকটি। এর জন্য গুনতে হয়েছে জরিমানা।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় নবায়ন করা হয় ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ঋণ। একই দিনে ব্যাংক থেকে ২২ কোটি টাকা তুলে নেন গ্রাহকরা। সেইসঙ্গে, এমডির ওপর চাপ তৈরি করা হয় আরো কিছু গ্রাহকের ঋণ প্রস্তাব পর্ষদে পাঠানোর জন্য।

ব্যাংকটির এমন অনিয়মের সাথে আপোষ না করে পদত্যাগের পথ বেছে নেন মেহমুদ হোসেন।

ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়। অর্থাৎ,বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ খেলাপি। আর, ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারে ১৯৮৪ সালে তালিকাভুক্ত এ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯২ দশমিক ৯ শতাংশ।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে যা প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top