স্টাফ রিপোর্টার: টানা সাত কর্মদিবস বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতন হল পুঁজিবাজারে; এর মধ্যে মূল্য সূচক এক দিন কেবল এক পয়েন্টের মত বেড়েছিল। বাকি প্রতিদিন কমেছে।
বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইসে’ বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা না থাকা, কখনও কোনো কোম্পানির শেয়ারদর ‘ফ্লোর’ ছাড়িয়ে গেলেও তা ধরে রাখতে না পারার কারণে নতুন বিনিয়োগে যেতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে অর্ধশত কোম্পানির দরপতন, দর অপরিবর্তিত রয়েছে আরও বেশি কোম্পানির। বৃহস্পতিবার ডিএসইর টপেটেন গেইনার তালিকা পূর্ণ হয়নি।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দাবি তুললেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন করে আর ফ্লোর প্রাইস তুলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। বাজারে যে আতঙ্ক, তাতে ‘ফ্লোর’ তুলে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এতে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো শেয়ারদর হারিয়ে ফেললে সূচকের বড় পতন হতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে গোটা পুঁজিবাজারে চলে এসেছে স্থবিরতা। অবনতি হচ্ছে দিনকে দিন। হতাশ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দর বেড়েছে কেবল সাতটি কোম্পানির। বিপরীতে দর হারিয়েছে ১৫০টি। ১৫৪টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। ফলে এদিন বাকি ৮০টি কোম্পানি বা ফান্ডের একটি শেয়ার বা ইউনিটও হাতবদল হয়নি। দরপতনে ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৫ পয়েন্টে।
সাত কর্মদিবস আগে দরপতন শুরু হওয়ার দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৭০ পয়েন্ট। এর মধ্যে কেবল ২০ ফেব্রুয়ারি এক পয়েন্ট সূচক বেড়েছিল। বাকি প্রতিদিনই কমেছে।
সূচকের এই অবস্থান গত ১০ জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ২০৫ পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবার সারাদিনে হাতবদল হয়েছে ২২২ কোটি ৯৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এই লেনদেন গত ২৬ ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ডিএসইতে হাতবদল হয় কেবল ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব?
ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজীম আলমগীর মনে করেন, অর্থনীতি নিয়ে গোটা বিশ্বে যে অনিশ্চয়তা, তারই প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।
তিনি বলেন, এটা অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। তবে বলা যেতে পারে যে, আমাদের কোম্পানিগুলো এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড। ডলারের দামের কারণে তাদের রিটার্ন ভালো হয়নি। যারা শেয়ার কিনবেন তারা হয়ত ফোরকাস্ট করছেন যে, এবার কোম্পানির আয় ভালো হবে না। সেটা একটা ন্যাচারাল কারণ হতে পারে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়বৃদ্ধি ও এলসি সমস্যার কারণে পর্যাপ্ত আমদানি করা যাচ্ছে না। যদি আগামীতেও না করা যায় তাহলে কোম্পানিগুলো উৎপাদন চালু রাখতে সমস্যা হবে। রিটার্ন আসবে না। এমন অবস্থায় শেয়ারের দাম বাড়তে পারে না।
ক্রেতা নেই বেশিরভাগ কোম্পানির
যেসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগেরই ক্রেতা ছিল না। ২৩টি কোম্পানির কেবল একটি করে, তিনটি কোম্পানির ৩টি করে, সাতটি কোম্পানির ৫টি করে, একটি কোম্পানির ৭টি, দুটি কোম্পানির ৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
৩১টি কোম্পানির ১০টি থেকে ১০০টির মধ্যে এবং ৭২টি কোম্পানির ১০০ থেকে এক হাজারের মধ্যে শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ ৬৭টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে এক থেকে সর্বোচ্চ এক হাজারটি শেয়ার।
যে লেনদেন হয়েছে তার প্রায় অর্ধেকই হয়েছে শীর্ষ ১০ কোম্পানিতে। ১০৪ কোটি ৮২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এসব কোম্পানিতে।
লেনদেনের শীর্ষ ২০ কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে মোট ১৪৭ কোটি ৫১ লাখ ২৭ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬৬ শতাংশের বেশি।
দর বৃদ্ধি নামেই
হাতে গোনা যে কয়েকটি কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে কেবল একটির শেয়ারদরে যোগ হয়েছে ৫ শতাংশের বেশি। সেটি হলো এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স। এর বাইরে ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের দর ১.০২ শতাংশ বেড়েছে।
বাকিগুলোর কোনোটির ০.০৪ শতাংশ, কোনোটির ০.১৬ শতাংশ, কোনোটির ০.১৯ শতাংশ, কোনোটির ০.৩০ শতাংশ, কোনোটির ০.৮৩ শতাংশ দর বেড়েছে।
ঢালাও পতনের দিনে তবু এ কয়টি কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের অর্থ হারাতে না হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে।
পতনের হার বেশি
বিপরীতে ‘ফ্লোর প্রাইসের’ বেশি আছে অথবা ‘ফ্লোর’ তুলে দেওয়ার পর দরপতনের সর্বোচ্চ হার এক শতাংশ নয়, এমন কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বেশি।
দুটি কোম্পানির শেয়ার ৬ শতাংশ, একটির ৫ শতাংশ, দুটির ৪ শতাংশ, ৭টির তিন শতাংশ, ছয়টি দুই শতাংশের বেশি, ১২টি এক শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে। এক শতাংশ বা তার চেয়ে কম দর কমেছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১১টি।
সবচেয়ে বেশি ৬.৯৭ শতাংশ দর হারিয়েছে মেট্রো স্পিনিং মিলস, মন্দা পুঁজিবাজারেও সেটির দর গত এক বছরে ১৯ টাকা থেকে ৫৪ টাকা ৬০ পয়সায় উঠে গিয়েছিল। টানা পতনে বর্তমান দর ৩৭ টাকা ৩০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.০৩ শতাংশ দর হারিয়েছে আলহাজ টেক্সটাইল। এই কোম্পানিটি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বড় লোকসান দেওয়ার পরও হঠাৎ করেই শেয়ারদর তার ফ্লোর প্রাইস ১৩২ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১৫৮ টাকা ৬০ পয়সায় উঠে যায়। এখন নেমেছে ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সায়।
অক্টোবরে ৬৬ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হওয়া প্রগতি লাইফ ‘মন্দা বাজারে’ ১৬৯ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এখন উল্টো যাত্রায়। দুই সপ্তাহ ধরে টানা দর হারাতে থাকা কোম্পানিটির দর কমেছে আরও ৫.৫১ শতাংশ, বর্তমান শেয়ারদর ১০৪ টাকা ৬১ পয়সা।
এছাড়া জেনেক্স ইনফোসিস ৪.৪২ শতাংশ, বিজিআইসি ৪.১৬ শতাংশ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩.৫৬ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড ৩.৫০ শতাংশ, কোহিনূর কেমিক্যালস ৩.৪৭ শতাংশ, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ৩.৩৯ শতাংশ এবং দরপতনের দশম স্থানে আমরা নেটওয়ার্ক ৩.২৮ শতাংশ দর হারিয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।