স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে মুডি’স এর সতর্কবার্তার ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহণের খরচ ও পুঁজিবাজারে প্রবেশের ক্ষমতা প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে মুডি’স এর দৃষ্টিভঙ্গি অবনমন হওয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের সুনাম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং ব্যয়বহুল হবে, যার ফলে দাম বেড়ে যাবে। পাকিস্তানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিংয়ের খরচ বাংলাদেশের তুলনায় কম।
এবিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঋণ প্রদান সীমিত করেছে।
সংস্কারের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবের কারণে এই অবনমন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ১৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। তাছাড়া, দেশের ব্যাংকগুলোকে প্রায়ই বৈদেশিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়, অর্থপ্রদানের মেয়াদ বাড়াতে হয় এবং বৈদেশিক ব্যাংগুলোর মাধ্যমে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নিশ্চিত করতে হয়। সামনে এর সবই আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে ৬২টি ব্যাংক রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো ব্যাংকই উচ্চ নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল), প্রভিশন ঘাটতি এবং দুর্বল গভর্নেন্সসহ আরো কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
সম্প্রতি ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত হিসেবে ব্যাংকিং খাত সংস্কারের কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান জোরদার করা, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স উন্নত করা এবং উচ্চ এনপিএলের সমস্যার উপর জোর দিয়েছে আইএমএফ।
মুডি’স এর প্রতিবেদন ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারী, গ্রাহক ও প্রতিপক্ষের আস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে তার ব্যাংকিং খাত সংস্কার, আস্থা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই অবনমন বাংলাদেশের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
“যদি এটি [অবনমন] একটি একক ব্যাংকের জন্য হতো, তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমরা আসলে কথা বলছি দেশের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা এখন ঋণ দেওয়ার আগে আরো বেশি সতর্ক থাকবে, বলেন তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুডি’স এর প্রতিবেদনের পর এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভাবতে পারে যে এখানে [বাংলাদেশে] ব্যবসার সম্ভাবনা তেমন ভালো নয় বা ব্যাংকিং সেক্টরের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। আমাদের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য আছে, তারাও এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নেবে।
এছাড়া, বেসরকারি বৈদেশিক ঋণের সুদের হারও বাড়তে পারে। এই রেটিং কমা আমাদের জন্য ভালো কিছু নয়,” বলেন তিনি।
কর্তৃপক্ষ যদি অবস্থার উন্নতির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ এখনই কম, দ্রুত কমছে রিজার্ভও দ্রুত। এগুলো বাড়াতে হবে।
রেটিং প্রণয়নের সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত, বিনিয়োগের সুযোগ ও পরিবেশ এবং নিয়ন্ত্রক পরিবেশসহ একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা হয়।
এ সংকট নিরসনে অবিলম্বে কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী করা দরকার সে সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) এবং অর্থ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট সচেতন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।