স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রেকিট বেনকিজার ও রবি আজিয়াটা লিমিটেডের লভ্যাংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত। কারণ এই দুই কোম্পানির লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ওইদিন। সমাপ্ত অর্থবছরে ৯৮০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে রেকিট বেনকিজার। আর ৭ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে রবি আজিয়াটা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজারের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ৯৮০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ কোম্পানিরটির শেয়ারহোল্ডাররা প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ হিসেবে নগদ ৯৮ টাকা পাবেন।
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের ব্যবসার ওপর এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। শেষ চার বছরের মধ্যে এটি কোম্পানিটির সর্বনিম্ন লভ্যাংশ ঘোষণা।
এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের একের পর এক রেকর্ড পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করে এ বহুজাতিক কোম্পানিটি।
১৯৮৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পর ২০১৯ সালের জন্য কোম্পানিটি প্রথমবার এক হাজার শতাংশের বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির বড় ধরনের ওই লভ্যাংশের ঘোষণা এমন সময় আসল যখন মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারাবিশ্ব অনেকটাই স্থবির ছিল।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে ২৬ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। এ বন্ধের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের সুখবর দেয় রেকিট বেনকিজার। ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি ১২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।
ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের মোট অঙ্কের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।
ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যে কারণে শেয়ারবাজারের সব থেকে দামি শেয়ারের প্রতিষ্ঠান এটি। ২০১৯ সালে লভ্যাংশ চমক দেখানোর পর ২০২০ সালেও চমক দেখায় কোম্পানিটি। ওই বছর ১৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানিটির লভ্যাংশে এর থেকে বড় চমক অপেক্ষা করছিল ২০২১ সালের জন্য। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।
লভ্যাংশের ক্ষেত্রে পরপর তিন বছর একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টির পর কোম্পানিটির লভ্যাংশে কিছুটা ভাটা পড়ে। অবশ্য ২০১৯ সালের আগের তুলনায় এখনো কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ বেশি রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান রেকিট বেনকিজার ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগের বছর ২০১৭ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ২০১৬ সালে ৭৭৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
নিয়মিত এমন বড় লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ মাত্র ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সে হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বড় লভ্যাংশ দিলেও তার সিংহভাগই নিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা।
অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও বিদেশিদের কাছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।
২০২২ সালের সমাপ্ত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার জন্য রেকিট বেনকিজার বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী ৩০ মার্চ। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ মার্চ। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ১৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭৬ টাকা ৮০ পয়সা।
অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর তৃতীয় বছরে এসে ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবি।
অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা প্রতি শেয়ারে পাবেন ৭০ পয়সা করে। বৃহস্পতিবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে এই লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
পরিচালনা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রবি শেয়ার প্রতি আয় করেছে রেকর্ড ৩৫ পয়সা। অর্থাৎ, যত আয় হয়েছে, তার দ্বিগুণ লভ্যাংশ দেবে কোম্পানি। সেজন্য তাদের হাত দিতে হবে রিজার্ভে।
কোম্পানিটির রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৩৮০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এখান থেকে পৌনে দুই শ কোটি টাকা খরচ হবে লভ্যাংশ বিতরণে।
আগের বছর এই আয় ছিল ৩৪ পয়সা। সে বছর ৫ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে বিতরণ করা হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
২০২০ সালে পুঁজিবাজারে আসার বছরে শেয়ার প্রতি ৩৩ পয়সা আয় করে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি রবি, যা বহুজাতিক কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে ৩ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৩০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেওয়া হয়। পরে চূড়ান্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয় ২ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা।
এই হিসাবে ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর শেয়ার প্রতি কেবল এক পয়সা করে আয় বাড়াতে পেরেছে রবি, যেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রামীণ ফোনের আয়ের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই বেশি।
সদ্য সমাপ্ত বছরের যে আয়, তার সিংহভাগেই হয়েছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে। এই প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ২৪ পয়সা আয় করেছে এ কোম্পানি। আগের তিন প্রান্তিক মিলিয়ে আয় ছিল ১১ পয়সা।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি রবি এবার আয় করেছে ১৮৩ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৩ টাকার মত।
আয়ের পাশাপাশি রবির সম্পদমূল্যও গত এক বছরে কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে ৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকার সম্পদ ছিল কোম্পানির। ২০২২ সাল শেষে তা বেড়ে ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা হয়েছে।
রবির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ২০২১ সাল শেষে ছিল ১২ টাকা ৬৪ পয়সা, এক বছর পর তা বেড়ে ১২ টাকা ৮২ পয়সা হয়েছে।
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি অর্থপ্রবাহ বেড়েছে অনেকটাই। ২০২১ সালে তা ছিল ৬ টাকা ২২ পয়সা, যা এক বছর পর বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ১২ পয়সা।
আগামী ১৩ মার্চ যাদের হাতে শেয়ার থাকবে, তারাই লভ্যাংশ পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। অর্থাৎ সেদিনই হবে রেকর্ড ডেট। আর লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম ডাকা হয়েছে আগামী ২৫ এপ্রিল।
২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় রবির। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেইস ভ্যালুতে ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ছেড়ে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর।
২০০৯ সালে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্তর প্রায় এক যুগ পর রবির পুঁজিবাজারে আসা নিয়ে বেশ উচ্চাশার কথা বলাবলি হচ্ছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছিল বেশ আগ্রহ। তবে উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে পরে বিপাকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।
লেনদেন শুরু হওয়ার পর প্রতিদিনই দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দর উঠে যায় ৭৭ টাকা ১০ পয়সায়। এরপর দর হারাতে হারাতে এখন কোম্পানির শেয়ারদর বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস ৩০ টাকায় নেমেছে।
তবে এই দরে শেয়ারের ক্রেতা নেই বললেই চলে। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন কেবল ৩৫২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির জন্য অর্ডার বসানো থাকে। কিন্তু দিনশেষে হতাশ হতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কেবল গত ৩০ নভেম্বর একদিন ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৪টি শেয়ার হাতবদল হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।