সকল মেনু

তিন কারণে ইসলাম অক্সিজেনের আইপিও আবেদন বাতিল

সিনিয়র রিপোর্টার: তিন কারণে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ওষুধ খাতের কোম্পানি ইসলাম অক্সিজেনের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি আইপিও আবেদন বাতিল করার কারণগুলোর হচ্ছে- প্রতিমাসের পণ্য বিক্রির বিপরীতে যে ভ্যাট দেয় তাতে তথ্যের অসঙ্গতি রয়েছে। কোম্পানি সম্পদ দেখানো হয়েছে অতিমূল্যায়তি করে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরে) ৬১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ফাঁকি দেয়ছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, তিন কারণে কোম্পানি আইপিওর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদেতর স্বার্থে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক হিসাবে অতিমূল্যায়িত করে সম্পদ দেখিয়েছে। বিক্রির বিপরীতে প্রমাণাদিও দেখাতে পারেনি কোম্পানিটি।

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে গ্যাস এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিপুল অংকের মূসক বা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির প্রকৃত বিক্রয়তথ্য গোপন করে মূসক দাখিল করে। মূসক দাখিল পত্রে কোম্পানিটি কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে ৬১ কোটি ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ২২০ টাকা মূসক ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া যায়।

রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ২৫ অক্টোবর রাতে রোড শো অনুষ্ঠানে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আ্যন্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠি থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মেসার্স ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরের মাসিক দাখিলপত্রের সাথে কর অঞ্চল –৭ থেকে পাঠানো অডিট ফার্মের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা নিরীক্ষা প্রতিবেদন আড়াআড়িভাবে যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে অডিট ফার্মের বার্ষিক রিপোর্টে প্রদর্শিত মূল্যের সাথে মূসক সংক্রান্ত দাখিল পত্রে ব্যাপক অসামঞ্জ্যসতা ধরা পড়েছে।

শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রসপেক্টাসে আর্থিক বিবরণী দেওয়া হয়েছে তার সাথে স্থানীয় ভ্যাট কার্যালয়ে দাখিলকৃত মাসিক রিটার্নের তথ্যের অমিল পাওয়া যায়।

অডিট ফার্ম কর্তৃক প্রণীত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং মাসিক দাখিল পত্রে উল্লিখিত বিক্রয় তথ্যে আড়াআড়ি যাচাই করে দেখা যায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ কোটি ৭১ লাখ ৮৯হাজার ৯৫৪ টাকা পরিহারকৃত মূসক ছিলো।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে যার পরিমাণ ১০ কোটি ৪৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৬ টাকা। পরের অর্থবছর অর্থাৎ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যার পরিমাণ আরও বেড়ে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৮টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩কোটি ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭২১ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ১৬ কোটি ৯১ হাজার ৬১ হাজার ৭০০ টাকা। উল্লেখিত তথ্যমতে ৬১কোটি ১৫ লাখ ৯৩হাজার ২২০ টাকার মূসক পরিহার করেছেন। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মূসক পরিহার করেছে।

বিভিন্ন শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, আর্গোশিল্ড, কর্ণন ও বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিক্সড গ্যাস উৎপাদন এবং সরবরাহ করা শুরু করে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রধান রাকিব হোসেনের সাথে। তবে তিনি এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ৯৩ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য আবেদন করে ইসলাম অক্সিজেন। তার আগের ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে রোড শো করে।

আইপিওতে ব্যয়ের পর প্রতিষ্ঠানটি বাকি টাকা দিয়ে নতুন ফ্যাক্টরি বিল্ডিং স্থাপন, প্ল্যান্ট এবং মেশিনারিজ স্থাপনে ব্যয় করবে। অক্সিজেন ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা থেকেই পুঁজিবাজারে যাত্রা শুরু করছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রায় ২৯ বছর আগে স্টিল ট্রেড বিজনেস দিয়ে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করে ইসলাম অক্সিজেন। পর্যায়ক্রমে কোম্পানিটি একাধিক স্টিল উৎপাদন ফ্যাক্টরি গড়ে তোলে। এই স্টিল মিলের প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে ইসলাম অক্সিজেন বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২০১৩ সালে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দ্বিতীয় প্ল্যান্ট স্থাপন এবং একটি এসিটিলিন প্ল্যান্ট গড়ে তুলেছে।

ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিল জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং রেজিস্ট্রার টু দ্যা ইস্যুয়ারের দায়িত্বে ছিল সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top