সকল মেনু

আইপিওতে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ

ফারহান ফেরদৌস: জিডিপির হিসাবে এখন বাংলাদেশের নিচে মালয়েশিয়া। ২০২২ সালে আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে ৭০ কোটি ডলার তুলে দিয়েছে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ দিয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আইপিওর মাধ্যমে মূলধন সরবরাহে ১০ গুণ পিছিয়ে বাংলাদেশ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের তথ্যে এসব জানা গেছে।

বাংলাদেশের জিডিপি ২০২১ সালে ছিল ৪১৬ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ১ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা তুলেছে ১৪টি কোম্পানি। ডলার ৮৪ টাকা ধরলে ডলারের হিসাবে হয় ১৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।

আর ২০২২ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ৬২৬ কোটি টাকা তুলেছে ছয়টি কোম্পানি। ডলার ৯৫ টাকা ধরলে ডলারের হিসাবে হয় ৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ার জিডিপি ২০২১ সালে ছিল ৩৭৩ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে মালয়েশিয়ার পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৬০ কোটি ডলার, তুলেছে ২৩টি কোম্পানি।

২০২২ সালে মালয়েশিয়ার পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৭০ কোটি ডলার, তুলেছে ২৯টি কোম্পানি। বাংলাদেশের কাছাকাছি জিডিপি এ রকম প্রায় সব দেশ থেকেই পেছনে বাংলাদেশ।

এর কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমরা দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে পারিনি। এর ফলে আমাদের দেশে পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ অনেক কম। যারা আমাদের দেশে আছে, তারা কেউ বিনিয়োগকারী না। তাদের বেশির ভাগই গ্যাম্বলার আর প্লেয়ার।’

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা আছে বলেন তিনি।

‘দেশের যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আছে। তারাও বিনিয়োগকারীদের মতো আচরণ করে না। তারা পারলে প্রতিদিন লেনদেন করে। এটি করতে আমরা সবাই ব্যর্থ হয়েছি। আপনি ব্যর্থ, আমি ব্যর্থ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা। আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি বিনিয়োগকারী তৈরি করতে’, বলেন মোহাম্মদ এ হাফিজ।

সচেতনতা কম

‘এ ছাড়া দেশের পুঁজিবাজারের ব্যাপারে সচেতনতা আমরা তৈরি করতে পারিনি। এ জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা দরকার। এটি একটি-দুটি ইনস্টিটিউট দিয়ে হবে না। যারা আমরা কাজ করছি, সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে’, বলেন মোহাম্মদ এ হাফিজ।

মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, ‘এটি বিনিয়োগের বাজার। অন্য বাজার থেকে ৮-১২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ২৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যেতে পারে। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি এটি বিনিয়োগের জায়গা। আমরা জুয়াড়িদের পেছনে দৌড়াচ্ছি। আমরা খালি খুঁজি কোন জুয়াড়ি কোন শেয়ার কিনছে। জুয়াড়িরা যেটি কিনছে সেটি বাড়বে। এটি কেন হবে। এগুলো পরিবর্তন করতে হবে।’

বিএসইসির বক্তব্য

কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আরও প্রণোদনা দরকার। বাংলাদেশে ঋণের জন্য ব্যাংক-নির্ভরতা বেশি। বাংলাদেশে কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ আছে। কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমে এলে, প্রণোদনা বাড়ালে পাশাপাশি বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করতে পারলে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থায়ন বাড়ানো যাবে।’

তবে একজন বাজার বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, এর পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনোভাব দায়ী।

থাইল্যান্ড থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ

থাইল্যান্ডের জিডিপি ২০২১ সালে ছিল ৫০৬ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৪১০ কোটি ডলার, তুলেছে ৪১টি কোম্পানি।

২০২২ সালে থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৩১০ কোটি ডলার, তুলেছে ৩২টি কোম্পানি।

ফিলিপাইন থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ফিলিপাইনের জিডিপি ২০২১ সালে ছিল ৩৯৪ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে ফিলিপাইনের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ২৫০ কোটি ডলার, তুলেছে আটটি কোম্পানি।

২০২২ সালে ফিলিপাইনের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৫০ কোটি ডলার, তুলেছে আটটি কোম্পানি।

২০২২ সালে ভারতের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৭৫০ কোটি ডলার, তুলেছে ১৩৮টি কোম্পানি।

২০২২ সালে জাপানের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ২২০ কোটি ডলার, তুলেছে ৯১টি কোম্পানি।

২০২২ সালে চীনের পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ডলারের হিসাবে হয় ৮ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার, তুলেছে ৩৯৯টি কোম্পানি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top