সকল মেনু

শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট: সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর পুঁজিবাজারের জন্য বেশ হতাশাজনক ছিল। এ সময় সূচকের পাশাপাশি দৈনিক গড় লেনদেনেও নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। মূলত দেশের পুঁজিবাজারের হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি সূচকের উত্থান-পতনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।

স্বাভাবিকভাবেই গত অর্থবছরেও পুঁজিবাজারের নিম্নমুখিতার পেছনে প্রভাবশালী শীর্ষ ১০ কোম্পানির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। এ সময়ে শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) ও বেক্সিমকো লিমিটেডের।

২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে অর্থাৎ গত বছরের ৩০ জুন শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস অর্থাৎ ২৬ জুন শেষে এ বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৮ কোটি টাকায়। মূলত সরকারি সিকিউরিটিজের তালিকাভুক্তির কারণে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেড়েছে।

তবে আলোচ্য সময়ের মধ্যে যুক্ত হওয়া সরকারি সিকিউরিটিজ বাদ দিলে গত অর্থবছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার সামান্য বেশি বা শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরে দেশের প্রধান এ পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধন বাড়া সত্ত্বেও শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি কমতে দেখা গেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ওঠানামার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় সূচকের উত্থান-পতন। সূচকের অধীন কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন নির্ধারণে ব্যবহার করা হয় ফ্রি ফ্লোট পদ্ধতি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় যে-সংখ্যক শেয়ার ইস্যু করা হয়, সেগুলোই ফ্রি ফ্লোট শেয়ার।

প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা শেয়ারের ওপর লকড ইন পিরিয়ড থাকা পর্যন্ত সেগুলো ফ্রি ফ্লোট শেয়ার হিসেবে গণ্য হয় না। এর বাইরে উদ্যোক্তা পরিচালক, সরকার এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ারধারীর কাছে থাকা শেয়ারগুলোও ফ্রি ফ্লোট শেয়ার নয়। ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ভিত্তিতে যে কোম্পানির বাজার মূলধন যত বেশি, সূচকের উত্থান-পতনে সেই কোম্পানির শেয়ারের প্রভাবও তত বেশি।

গত অর্থবছর পুঁজিবাজারের প্রভাবশালী শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন কমার গ্রাফ ও ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের পয়েন্ট হারানোর গ্রাফ প্রায় একই সমান্তরালে চলেছে। এসব কোম্পানির শেয়ারদর যখন কমেছে, পুঁজিবাজারের সূচকও তখন নিম্নমুখী ছিল। অন্যদিকে যখনই এসব কোম্পানির শেয়ারদর কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, তখন পুঁজিবাজারের সূচকেও ঊর্ধ্বমুখিতা লক্ষ করা গেছে।

ফ্রি ফ্লোট বাজার মূলধনের দিক দিয়ে দেশের পুঁজিবাজারের শীর্ষ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকায়। অর্থবছরের শুরুতে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৬১২ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে বিএটিবিসির বাজার মূলধন ছিল ২৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছর শেষে যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১০ কোটি টাকায়। এ সময়ে বিএটিবিসির বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বেক্সিমকো লিমিটেডের বাজার মূলধন ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ছিল ১১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছর শেষে যা ১ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে ১০ হাজার ১৩০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ভিত্তিতে বাজার মূলধন বিবেচনায় শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ওষুধ খাতের কোম্পানি রেনাটা লিমিটেড। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের অর্থবছরে শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে খাতসংশ্লিষ্ট আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বাজার মূলধন ছিল ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।

সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর শেষে যা ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৩৭৫ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের রিটার্ন কমেছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ওষুধ খাতের আরেক কোম্পানি বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের বাজার মূলধন ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির এ মূলধন ছিল ৫ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৩০৭ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।

গত এক বছরে ১ হাজার ১২ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে গ্রামীণফোন। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৩৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকায়। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের বাজার মূলধন এক বছরের ব্যবধানে ১২৮ কোটি টাকা বেড়েছে। ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ বাজার মূলধনি কোম্পানির তালিকায় কেবল এই একটির কোম্পানির বাজার মূলধন আলোচ্য সময়ে বাড়তে দেখা গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২ কোটি টাকায়। এর আগের অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৭ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকায়। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন বেড়েছে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ভিত্তিতে বাজার মূলধন বিবেচনায় শীর্ষ ১০ কোম্পানির সর্বশেষ রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির বাজার মূলধন ৩৮৬ কোটি টাকা কমে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায়। এ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top