সকল মেনু

ক্ষতবিক্ষত পুঁজিবাজার, বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি

অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশের মানি মার্কেট ও শেয়ার মার্কেট। অন্তর্বর্তী সরকারের গভর্নর মানি মার্কেটে থাকা ব্যাংকগুলোকে অর্থ সহায়তা দিয়ে স্তিমিত করেছে। অন্যদিকে শেয়ার মার্কেটের বিচক্ষণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নীতি সহায়তা দিলেও ক্ষতবিক্ষত আরও প্রকট হয়ে উঠছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বন্ড লেনদেনে টাকার পরিমাণ তলানিতে নেমেছে। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষদিনে লেনদেন হয়েছে ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে।

ফলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন সংগঠনের ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

পদত্যাগের পাশাপাশি ‘ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন’ করার দাবি জানান তারা। তাদের অভিযোগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন তদন্ত ও জরিমানা কখনোই মার্কেটের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। সবসময় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা নতুন কমিশনের কাছে আর অর্থ হারাতে চাই না।

ঢাকার মতিঝিলে বিআরবি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মো. রুমি বলেন, নতুন কমিশনের কাছে আমরা অনেক কিছু আশা করেছিলাম। তারা বিজ্ঞতার পরিচয় দেননি। কারণ ২৮টি কোম্পানির ক্যাটাগরি বদলের তথ্য বাজারে আগেই কীভাবে ছড়াল? শুদ্ধাচার পালনে ব্যর্থ বা অব্যর্থ সব কোম্পানি তথ্য কমিশনে আছে। তবু অশুভ সময়ে কোম্পানি পরিচালক ও সুবিধাভোগীদের শাস্তি ঘোষণা করেছেন। এটা কয়েকদিন পরেও তারা করতে পারতেন।

মতিঝিলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিকিউরিটিজ হাউসের একজন ট্রেডার বলেন, কোম্পানিগুলোর কয়েকদিন পরে আসবে ডেভিডেন্ড ডিক্লারেশন। সেই নথি ধরে কমিশন ব্যবস্থা নিলে কারও আপত্তি উঠত না। নতুন কমিশন মার্কেটের এখনো পালস বুঝতে পারেনি।

প্রসঙ্গ ধরে বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওহিদুর রহমান বলেন, বিচক্ষণ কমিশনকে আরও ভাবতে হবে। কমিশনের নীতি সহায়তা নিয়ে গ্রাহকের আস্থার বিষয়ে আরও ভাবনার রয়েছে। নতুন কমিশনের প্রতি অনেক প্রত্যাশা থাকলেও মার্কেট আরও খরাপের দিকে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করছেন, এটা শুভ লক্ষণ নয়।

দেশের শীর্ষ একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সব কিছু নিয়ে বসে আছে বিএসইসি। অথচ এই কাজগুলো ডিএসই ও সিএসই করতে পারে- এটা তাদের কাজ। বিএসইসি এখানে দেখতে পারে দায়িত্বে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠান আইনের বাইরে কিছু করেছে কি না। তারা মানুষের পার্লস বুঝে উঠতে পারছে না।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এতো ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিকিউরিটিজ হাউসের দরকার নেই। অপকর্মের দায়ে কয়েকটি বন্ধ হলে টোটাল ইকোনমির কি ক্ষতি হবে। বিএসইসির কাছে কোয়ানটিটি চাই না, কোয়ালিটি চাই।

দরপতনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন কমিশনে তাদের আস্থার স্থানটা নষ্ট হতে চলেছে। তারা আর টাকা হারাতে চান না। শুধু নীতি দিলেই হবে না, পুঁজিবাজারে যারা প্রাণ তাদের আস্থার স্থলের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন তাদের দিকেও দেখা দরকার।

মার্কেট মেকারদের দণ্ড সম্পর্কে আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের রাসেল কবির যান্ত্রিকভাবে হিসাব বন্ধের সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, বারবার কোনো কোম্পানির শেয়ার তদন্তের চেয়ে সফটওয়্যারকে ডেভেলপ করতে হবে। যাতে কেউ সিরিয়াল ট্রেড করতে না পারে। সিরিয়াল ট্রেড ধরা পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধরা পড়বেন এবং সেই কোড নির্দিষ্ট দিনের জন্য ফ্রিজ হয়ে যাবে।

হেড অব ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে রাসেল বলেন, এভাবে পরপর দুইবার ওই কোড ফ্রিজ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ছয় বা এককালীন বন্ধ হয়ে যাবে। কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে না- এমন খেলায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। প্রচলিত শিশুতোষ খেলা বন্ধ করতে হবে। এই ধরনের তদন্ত কখনোই মার্কেটের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। যা সব সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেন রাসেল কবির।

বিনিয়োগকারীদের একাংশের অভিযোগ, নীতি সহায়তার নামে খড়গ চালিয়েছে নতুন কমিশন। তারা এখন পর্যন্ত বিশেষ ভালো কিছু করে দেখাতে পারেনি। পুঁজিবাজারে সংস্কার নিয়ে গত সোমবার রোডম্যাপ তৈরি করতে অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির আলোচনা করে।

সেদিন মিলে তিন দিনে সূচক কমেছে ২০৪ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমে ১৩ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে বাজার ভালো হলেও দুপুরে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়ার গোপন খবরে বাজার পড়ে যায়। নীতি সাপোর্ট দিয়ে তারা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না। কাজেই তাদের পদ ছেড়ে দেওয়া দরকার।

নতুন করে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় প্রতিবাদে নেমেছেন সাধারণ অনেক বিনিয়োগকারী। সকালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে বিএসইসি ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিনিয়োগকারীরা। দুই দিন বিক্ষোভ করা বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, ব্যর্থ মাকসুদ কমিশনের আমরা পদত্যাগ চাই।

ডিএসইর লেনদেন তথ্য : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ৩৯৭টি কো¤পানির ১২ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ৭৩২টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার মোট লেনদেনের পরিমাণ ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৫ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top