শাহীনুর ইসলাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ করেনি কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। যে কারণে মূল মার্কেট থেকে ছিটকে পড়ে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ কমিশনের শর্তে ফের মূল মার্কেটে ফিরে আসে সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড।
তবে এবারে কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণ নয়; বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ করার লক্ষ্য। শুরু থেকেই ফাঁদ পেতে বসা সোনালী পেপার কিভাবে বিনিয়োগকারী স্বার্থ রক্ষা করবে- তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের বোনাস শেয়ার দেয়া সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের রাইট শেয়ারের সাবসক্রিপশন ৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বোনাস শেয়ার পেতে আবেদন চলবে ২২৮ জুন পর্যন্ত।
২০১১ সাল থেকে বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধিকারী প্রতিষ্ঠানটি পরে নানা অভিযোগে মূল মার্কেট থেকে ছিটকে পড়ায় ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। মূল মার্কেটে ফেরার আগে বিভিন্ন গুজবের গজবে শেয়ারদর উড়তে থাকে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে উত্থানের শুরু।
২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রতি শেয়ারে ৩০০ টাকা শেয়ার দর স্পর্ষ করে। কোম্পানির মোট ২ কোটি ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬০টি শেয়ার হওয়ায় খুব সহজে কারসাজী করা সম্ভব হয়। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও শেয়ার বেশি ধারণ করেন।
পরে ২০২০ সালে ফের মূল মার্কেটে ফিরেই ২০২১ সালে ২০ শতাংশ (২০ বোনাস এবং ২০ নগদ) লভ্যাংশ প্রদান করে সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। এরপরে আরো উড়তে থাকে শেয়ারদর। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৯৫৭ টাকায় অবস্থান নেয় এবং এ সময়ে রাইট শেয়ারের ঘোষণা আসে।
মূল মার্কেটে ফিরে ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান এবং অন্যান্য নীতিমালা মেনে ২:১ রাইট শেয়ারের আবেদন করলে পুঁজিবাজার থেকে ১১ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার ৭২৯ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ১৭ হাজার ২৯০ টাকা টাকা তুলবে।
রাইট শেয়ারের মাধ্যমে তোলা অর্থ দিয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি কিনবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাইট শেয়ারের মাধ্যমে তোলা অর্থ দিয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি কিনবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ অ্যালুমিনিয়াম ফুড কনটেইনার বক্স উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অ্যালুমিনিয়াম ফুড কনটেইনার বক্স উৎপাদন করার লক্ষ্যে কোম্পানিটির কারখানায় নতুন মেশিন স্থাপন করা হবে। নতুন মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে কোম্পানিটি দৈনিক এক লাখ অ্যালুমিনিয়াম ফুড কনটেইনার বক্স উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।
বিনিয়োগকারীরা আবেদনের প্রেক্ষিতে সোনালী পেপারের দুটি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে রাইট শেয়ার পাবেন।
তবে কমিশনের শর্ত হচ্ছে, কোম্পানির কর্তৃপক্ষ আগামী ৫ বছর কোন বোনাস শেয়ার দিয়ে মূলধন বৃদ্ধি করা এবং স্পনসর-ডিরেক্টরা ৩ বছর কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না।
তাদের শেয়ার লকইন থাকবে বলে শতারোপ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। তবে শর্তারোপ করা হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রথম উত্থানের দিকে শেয়ার ধারণে আগ্রহী হলেও পরে কমিয়ে ফেলেছে।
বর্তমানে বিদেশি কোন বিনিয়োগ নেই। তবে কোম্পানির ২ কোটি ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬০টি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২২.৭০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ৯.৭৯ এবং উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৬৭.৫১ শতাংশ শেয়ার আওতায় রেখেছেন।
‘গুডগভর্নেন্স’ এবং ‘নিরাপত্তা’ আশঙ্কায় দ্রুত সটকে পড়েন বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। অনেকাংশে সাধারণ বিনিয়োগকারী ঝুঁকি কমাতে গত এপ্রিল মাসে তাদের শেয়ারের পরিমাণ কমিয়ে ২২.৭০ শতাংশ করলেও মে মাসে তা সামান্য বাড়িয়ে ২৩.৯১ শতাংশ করেছে।
তবে সাময়িক মুনাফার লোভে এখানে অনেকে অবস্থান নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী হওয়া মানে আশঙ্কা। তাই অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন সোনালী পেপারে রাইটের আবেদনকারী কয়েকজন।
তারা বলেন, ছোট কোম্পানির কম শেয়ারের দাম সহজে বাড়া-কমা করা সম্ভব। তাই এখানে চতুর বিনিয়োগকারীরাই অবস্থান নেয়। তাই এখানে দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মত দেন তারা।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ৩০ জুন ২০২১ সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ মূল্য ২৩৫ দশমিক ২৭ টাকা। শেয়ার প্রতি আয় (ডায়লুটেড) ৪ টাকা ৭ পয়সা।
কোম্পানটির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।