শাহীনুর ইসলাম: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে ছিল অবহেলিত কোম্পানিগুলোর একটি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো)। শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কাছেই ছিল দাম।
সেই কোম্পানির গত সপ্তাহজুড়ে ১ কোটি ১৭ লাখ ১৬ হাজার ১৪১টি শেয়ার লেনদেন হয়। টাকার হিসাবে যা ১৫৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার বা মোট লেনদেনের ৪ শতাংশ। প্রায় একযুগে বেক্সিমকোর এমন লেনদেন হয়নি। তবে ২০১১ সালে কিছুটা হয়েছিল।


২০২০ সালের ১৮ মার্চে শেয়ারপ্রতি দর ছিল প্রায় ১২ টাকা। যদিও তার আগে ২০১১ সালের ১ আগস্ট মাসে দর ছিল ১৮৪ টাকা। এরপরে ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ধ্বসের আগে ২৪ জানুয়ারি শেয়ারপ্রতি দর কমে হয়েছিল ৮৪ টাকা।
তবে ওষুধখাতের কোম্পানিগুলোর রুগ্স চেহারা বদলে করোনাকালে। সারা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বন্ধ হয় দেশের উভয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন। তিন মাস ‘ট্রেড সাসপেন্ড’ থাকার পরে জুলাই মাসে ফের কেঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় লেনদেন।
এ সময়ে অসুস্থ্য পৃথিবীর মানুষ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্থ। ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র ওষুধ আর অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরের যাওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার।
২০২০ সালের জুলাই মাসের দেশের সব ওষুধ কোম্পানি ব্যাপক মুনাফা করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত মুনাফার খবর এবং করোনাভাইরাসের টিকা বা খাওয়ার ক্যাপসুল আমদানীর খবরে বাড়তে থাকে শেয়ার দর।


আগুনের ফুলকির মতো উত্তাপ বাড়তে থাকে চারদিকে। সর্বোচ্চ মুনাফার প্রতিবেদন আরো উত্থান যোগায়। ২০১২ সালের পরে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে শেয়ার দরের পিরামিড উঁচু হতে থাকে।
১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে মূলধন বৃদ্ধিকারী কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৩৫% নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০২১ সালে সর্বোচ্চ শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৭.৫৩ টাকা এবং এনএভি হয় ৭৮.২৮ টাকা।


২০১২ সালের পরে ২০২০ সাল পর্যন্ত যা হয়নি; আগামীদিনে এমন মুনাফার চিত্র দেখতে পারবে কিনা না সন্দেহ রয়েছে। প্রায় এক যুগের তথ্য ও বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সাবধান হওয়ার আভাস দিচ্ছে।
তবে ২০১০ সালে ছিল সবচেয়ে বেশি ৪০.৮২ টাকা এবং এ সময়ে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল ৫০ শতাংশ। ২০০৯ সালে ৩৪.০৫ টাকা ইপিএসে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ বোনাস দেয় ৬০ শতাংশ। এ সময়ে অধিক বোনাস শেয়ার নামে মূলধন বৃদ্ধি করা হলেও ঠকতে থাকে বিনিয়োগকারী। দ্রুত ইপিএস, এনএভিসহ সব কমতে থাকে।
ফলাফল ভয়াবহ হতে শুরু করে ২০১১ সালে যখন ইপিএস ২৩.৭৩ টাকা হয়। চূড়ান্ত রূপ পায় বা ধসে পড়ে যখন ২০১২ সালে ইপিএস নামে ৩.৭৩ টাকায়। সর্বোচ্চ শেয়ার দরের চূড়া ধসে পড়ে। (উপরের চিত্রে আরো অনেক তথ্য, দেখুন)


তবে চলতি হিসাবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৫১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় দুই টাকা ৩৮ পয়সা ছিল। আর প্রথম তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসে (জুলাই, ২০২০-মার্চ, ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৩ টাকা ১৮ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময় ৪ টাকা ৩০ পয়সা ছিল।


আর ২০২১ সালের ৩১ মার্চে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮৮ টাকা ২ পয়সা, যা ২০২১ সালের ৩১ মার্চে ছিল ৭৮ টাকা ২৮ পয়সা।
এছাড়া প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ১২ টাকা ২২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৪ টাকা ৮২ পয়সা।
এদিকে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৭ টাকা ৫৩ পয়সা।


আর ৩০ জুন ২০২১ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ২৮ পয়সা। আর আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ২ টাকা ৩ পয়সা লোকসান।


এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটি ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এক হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৮৭৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
রিজার্ভের পরিমাণ ৫ হাজার ৮১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৯ শেয়ার রয়েছে।