স্টাফ রিপোর্টার: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আর কারসাজিচক্রের দৌরাত্মে দেশের দুই পুঁজিবাজারে শুরু হয়েছে বিপর্যয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই ও সিএসই) শেয়ারলেনদেন কমে যাওয়ায় চলছে সূচকের পতন। ঈদের পর কেবল ডিএসইতে টানা ৬ কার্যদিবসের দরপতনে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই/২০২২) ডিএসইর প্রধান সূচক ৬৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে কমেছে ১১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ৩৩ দশমিক ৭২ পয়েন্ট। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫১৫ কোটি ২৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ, ১৮ জুলাইয়ের তুলনায় ১৯ জুলাই কম লেনদেন হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
ক্রেতাসঙ্কটের কারণে ডিএসইতে মঙ্গলবার ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম লেনদেন হয়েছে। আর এতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৪ হাজার ৯১৪ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আগের দিন (১৮ জুলাই) প্রধান সূচক ৮৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজার ২১৬ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ১৮ জুলাই ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৬ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৩১ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমেছে। ওইদিন বিনিয়োগকারীরা হারায় ৫ হাজার ৮১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার পুঁজি। অর্থাৎ, দু’দিনে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
আবার, আগের সপ্তাহে অর্থাৎ, ঈদের ছুটি শেষে ১২-১৪ জুলাই/২০২২ পর্যন্ত ৩ কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ২ হাজার ৮ শত ১২ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ৭২৫ টাকা। সবমিলে (৬ দিনে) প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) ২১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৬ পয়েন্টে। সিএসইতে এদিন ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের ১১ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ৩৫৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সোমবার (১৮ জুলাই) সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) ২৪২ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ২৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিল। ওই দিন সিএসইতে ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ধারাবাহিক পতনে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের বৈদ্যুতিক ঘাটতির মুহূর্তে কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারে সক্রীয় রয়েছে কারসাজিচক্র। এর বিপরীতে কারসাজিতে জড়িতদের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ সুযোগে পর্যায়ক্রমে শেয়ারদর কমতে পারে বলে পুঁজিবাজারে গুজব ছড়াচ্ছে অসৎ শ্রেণী। আর, এসব কারণে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে তৈরি হচ্ছে আস্থার সঙ্কট। বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। ক্রমাগত শেয়ারদরের আরো পতনের সংশয় তৈরি হয় তাদের মধ্যে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরো মনে করেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং দ্রুত পুঁজি ফিরে পেতে মরিয়া শেয়ারহোল্ডাররা। আর, এতে পুঁজিবাজারে চাপ বাড়ে শেয়ার বিক্রির। তৈরি হয় ক্রেতাসঙ্কট। -যেকারণে কিছুদিন ধরে বাজার নিম্নমূখী।
দীর্ঘসময় এ অবস্থা প্রলম্বিত হলে বাজারে ব্যাপক ধ্বস নামতে পারে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা
পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, কারসাজি রোধে আইএমএফের পরামর্শসহ নানা কারণে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায় এবং দেখা দেয় ক্রেতাসঙ্কট। -যেকারণে বড় দরপতনের এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
বাজার পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহর নেতৃত্বে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সহায়তায় রোববার (১৭ জুলাই/২০২২) মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পুঁজিবাজারে কারসাজিচক্রের নিরোধসহ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি, ব্যাংক খাতের তদারকি শক্তিশালী করাসহ করপোরেট সুশাসন উন্নত করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে ঋণের হিসাব পদ্ধতি সংশোধন ও আইনি সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।