সিনিয়র রিপোর্টার: পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল বা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) আকার দাঁড়িয়েছে ১১২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়। এর মধ্যে নগদ অর্থ দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ১ লাখ টাকায় আর ৮ কোটি ১২ লাখ শেয়ার বাবদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর সময়ে এই ফান্ড দাঁড়িয়েছে।
সিএমএসএফ সূত্রে জানা গেছে, ১১শ কোটি টাকার ফান্ডের মধ্যে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ২২৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে গোল্ডেন জুবিলি ফান্ডে।
সবমিলে ২৭৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। এখনও ৮৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ২১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর ৬৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে কোম্পানিতে।
সার্বিক বিষয়ে সিএমএফসএফের চিফ অব অপারেশন (সিওও) মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ সিএমএফসএফের তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও এখনও বেশকিছু কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নগদ ও বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ জমা দেয়নি, এগুলো জমা দিলে ফান্ডের আকার আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ফান্ডের অর্থ পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিনিয়োগ করা হবে। আমরা বিনিয়োগকারীদের অর্থ বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিনিয়োগ করছি।
অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ কী?
কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা তাদের ডিভিডেন্ড অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারীদের নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নগদ লভ্যাংশ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। স্টক লভ্যাংশ জমা হয় তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টে।
যাদের নামে শেয়ার তারা কেউ মারা গেলে, বিদেশে চলে গেলে কিংবা দীর্ঘদিন খোঁজ না রাখলে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। বিও হিসাবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এমন ক্ষেত্রে লভ্যাংশের টাকা বা শেয়ার বিনিয়োগকারীর ব্যাংক বা বিও অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে কোম্পানির কাছে ফেরত যায়।
বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর অনেক সময় তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে তার মনোনীত উত্তরাধিকারও সেই টাকা বা শেয়ার আর দাবি করেন না। এর বাইরেও আইনি জটিলতা বা অন্য কারণে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হাতে পৌঁছায় না অনেক সময়। তখন কোম্পানি ওই সব লভ্যাংশ ‘সাসপেন্ডেড’ হিসাবে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে। সিডিবিএলের হিসাবে, ফান্ড তৈরির সময় সাসপেন্ডেড বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩১৫টি। এখন সেই সংখ্যা কমে এসেছে।
প্রথম দিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) ধারণা ছিল ফান্ডের আকার হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেটা হয়নি। তারপর প্রত্যাশা করা হয় তহবিলের আকার হবে ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কিন্তু সেই লক্ষামাত্রাও পূরণ হয়নি।
বর্তমানে ফান্ডটির পরিমাণ ১১২১ কোটি টাকা। ব্যাংকসহ যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও নগদ অর্থ বাকি রয়েছে এগুলো জমা হলে ২ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই তহবিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান। পরিচালনা পর্ষদে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক তানজিলা দিপ্তী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ফজল বুলবুল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সিসিবিএলের স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ তারেক এবং এ কে এম দেলোয়ার হোসেন রয়েছেন।
নিয়ম অনুসারে, এই তহবিলের ৪০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে। ৫০ শতাংশ অর্থে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে। আর ১০ শতাংশ অর্থ অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা সরকারি সিকিউরিটিজ, স্থায়ী আমানত ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।