সকল মেনু

ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের ৫০০ মিলিয়ন টাকার জালিয়াতি

সিনিয়র রিপোর্টার: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সম্পদ ব্যবস্থাপক ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস (UFS) ইক্যুইটি পার্টনারদের দ্বারা আরেকটি আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়েছে। ৫০০ মিলিয়ন টাকার বিনিয়োগ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস (UFS) ইক্যুইটি৷

UFSEPL ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড এবং UFSEPL প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ড ২০২১ সালের শেষে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়৷ এনবিএল বাংলাদেশ ব্যাংক (BB) থেকে একটি অনাপত্তিপত্র প্রাপ্তির পর প্রতিটি তহবিলের জন্য ২৫০ মিলিয়ন টাকা বিতরণ করে৷

বিতরণের প্রায় এক বছরে, তহবিল ব্যবস্থাপক ইউএফএস ইক্যুইটি পার্টনারস অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে এনবিএলকে কোনও তথ্য দেয়নি। বিনিয়োগ সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের জুলাইয়ে এনওসি বাতিল করে দেয় এবং এনবিএলকে টাকা পুনরুদ্ধার করতে বলে।

এনবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, অর্থ উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের শীর্ষ ব্যক্তি যোগাযোগের বাইরে থাকায় আমরা সমস্যায় আছি,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছরের ডিসেম্বরে তহবিল ব্যবস্থাপক এবং অন্যান্য পক্ষের সুবিধার জন্য বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অবৈধ অর্থ প্রদান করা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য একটি তদন্ত শুরু করে।

নতুন করে ইক্যুইটি পার্টনারদের অর্থলোপাটের বিভিন্ন খবরে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যা ইতিমধ্যেই শিরোনাম হয়েছে এর শীর্ষ নির্বাহী সৈয়দ হামজা আলমগীর। তিনি ১.৫৮ বিলিয়ন টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে৷ অর্থিক কেলেঙ্কারির শিকার ফান্ডগুলো হল- পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, শরীয়াহ ইউনিট ফান্ড, ব্যাঙ্ক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং দ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনবিএলকে ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ডে ১ বিলিয়ন টাকা এবং ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে ১ বিলিয়ন টাকার বিনিয়োগের পক্ষে একটি এনওসি জারি করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সালের সার্কুলার অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে বিশেষ উদ্দেশ্য তহবিলে ২ বিলিয়ন টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্টক মার্কেটে ব্যাঙ্কের এক্সপোজার অনুমান করার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিনিয়োগগুলিকে বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

বিনিয়োগকারীকে কিছু শর্ত পূরণ করে এনওসি জারি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিটি তহবিলের জন্য প্রথম কিস্তি একটি নির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিপরীতে বিতরণ করার কথা ছিল; তা হয়নি। তবুও পুরো অর্থ চারটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়। প্রথম কিস্তির সঠিক ব্যবহার হলেই দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিনিয়োগের ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করার কথা ছিল; তা হয়নি।

ইউএফএস প্রথম কিস্তিতে এনবিএলের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা পেয়েছে, এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। কিন্তু ২০২২ সালের মার্চ মাসে, যখন ব্যাংক বিনিয়োগের ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল, তখন ইউএফএস বিনিয়োগে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে এবং পরে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে ‘জাল নথি’ সরবরাহ করে।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। ত কমিটি তাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উভয় তহবিলের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করতে বলেছে।

অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, “তদন্ত এখনও শেষ হয়নি”। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য অতিরিক্ত পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক এবং একজন সহকারী পরিচালক রয়েছে।

এদিকে একটি চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিএলকে তহবিলের ট্রাস্টি, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সহায়তায় অর্থ ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে।

এ বিষয়ে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সেক্রেটারি মিজানুর রহমান বলেন, ফান্ড ম্যানেজার প্রথমে তথ্য দেওয়ার জন্য সময় বাড়িয়েছিলেন। তারপর ট্রাস্টি গত ২২ নভেম্বর অ্যাসেট ম্যানেজারের সাথে একটি বৈঠক করে এবং তহবিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে।

এখন, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রককে খুঁজে বের করতে হবে যে তহবিল ব্যবস্থাপক টাকা দিয়ে কী করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top