Homeঅনুসন্ধানী প্রতিবেদননতুন আইনে কারসাজি করে ‘অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত’ হবে

নতুন আইনে কারসাজি করে ‘অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত’ হবে

সিনিয়র রিপোর্টার: শেয়ারবাজারে কারসাজি বা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দশ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। এমন বিধান রেখে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এবং একই বিষয়ে ১৯৯৩ সালের আইনের পরিবর্তে নতুন আইন হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন-২০২২ নামে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। খসড়ার ওপর জনগণের মতামত চাওয়া হয়েছে।

আইনের খসড়ায় কারাদণ্ড ও জরিমানার পাশাপাশি কারসাজি বা প্রতারণা করে অর্জিত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং এর ফলে ক্ষতির কমপক্ষে দ্বিগুণ অর্থ জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে শেয়ার কেনার পর তথ্য অসত্য হলে এবং এর ফলে কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। তবে ঘটনার তিন বছরের মধ্যেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে হবে।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত বা প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর প্রস্তাব খসড়া আইনে আছে।

এতে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে প্রতারণামূলক কাজ, অসাধু ব্যবসা ও কারসাজি বন্ধ এবং মালিকপক্ষ ও দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতনদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শেয়ার ব্যবসা (ইনসাইডার ট্রেড) বন্ধে তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে এ সংস্থা। বিদ্যমান আইনে এ সুযোগ নেই।

বিদ্যমান আইনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রথম কাজ হিসেবে শেয়ার বা অন্য সিকিউরিটিজ ইস্যুর যথার্থতা নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের ইস্যুকৃত শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণকে আগে আনা হয়েছে। পরে সঠিকভাবে শেয়ার ইস্যু নিশ্চিতের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে।

খসড়া আইনের ৫৮ ধারায় সরল বিশ্বাসে অর্জিত সিকিউরিটিজ নামক ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনা প্রতারণায় ও বৈধ প্রতিদানের মাধ্যমে কোনো শেয়ার বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজ পাওয়ার পর যদি জানতে পারেন, যার থেকে এ শেয়ার বা সিকিউরিটিজ পেয়েছেন, ওই ব্যক্তির স্বত্বের ত্রুটি রয়েছে, তারপরও ক্রয়কারী ব্যক্তি ত্রুটিমুক্তভাবে ওই সিকিউরিটিজ ধারণ করতে পারেন।

তবে কোনো ব্যক্তি সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানির শেয়ার ইস্যু করলে বা কোনো মৃত ব্যক্তির একাধিক উত্তরাধিকারের পরিবর্তে একজন শেয়ার বিক্রি করলে সে ক্ষেত্রে কী হবে, তার উল্লেখ নেই।

খসড়া আইনে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলেও তার জিম্মায় থাকায় কোনো বিনিয়োগকারীর সম্পদ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানটির ‘পরিসম্পদ’ হিসেবে গণ্য করা বা অন্যের দায় মেটাতে ব্যবহার করা যাবে না বলেও প্রস্তাব আছে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এড়িয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির একীভূতকরণ, অঙ্গীভূতকরণ বা পুনর্গঠন নিয়ন্ত্রণেরও ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক হিসাব নিরীক্ষক বা সম্পদ মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিরূপণ ও নিয়ন্ত্রণ করা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বর্ণিত অপরাধ শেয়ারবাজারে সংঘটিত হলে অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ধরন বিবেচনায় স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়ে কোনো সিকিউরিটির (শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি) বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিতে পারবে বিএসইসি।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুবিধাভোগী হিসেবে বিবেচিত (পরিচালক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারী) বা কমপক্ষে ১০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা পারিবারিকভাবে সম্পর্কিত বা ঘনিষ্ঠ কেউ ওই শেয়ারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখলে তাকেও কমিশন নির্ধারিত ফরমে মালিকানা সম্পর্কিত রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে। এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শর্ট-সেলিং প্রথাও নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া আইনে নতুন বিধি প্রণয়ন ছাড়া কমিশনের যে কোনো ক্ষমতা সংস্থার চেয়ারম্যান বা কমিশনার বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা অধস্তন কর্তৃপক্ষের কাছে অর্পণ করার কথা বলা হয়েছে। চাইলে আগাম মতামত নিয়ে সরকার কমিশনকে নীতিগত কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারবে মর্মে প্রস্তাব আছে খসড়া আইনে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত