Homeঅর্থনীতিক্ষেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল

ক্ষেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল

ডেস্ক রিপোর্ট: যশোরের একটি ক্ষেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও আঙুরের ফলন দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ইউটিউব দেখে মিষ্টি আঙুর চাষ করে বাজিমাত করেছেন যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী (৫৫)।

তার এই আঙুরের চাষ পদ্ধতি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন আঙুর ক্ষেতে। অনেকে আবার আঙুরের চারাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে কলম বা চারা কিনে লাগালেও ভালো ফলন পাননি কৃষক মুনসুর আলী। কিছু ফলন পেলেও তা ছিল খুবই টক এবং পরিমাণেও কম। সর্বশেষ ইউটিউবে আঙুর চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০ মাস আগে তিনি ৩৩ শতক জমিতে ভারতীয় চয়ন ও ইটালির সনিকা জাতের ১২০টি আঙুরের চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের ৭ মাস পর গাছে ফল আসে।

কৃষক মুনসুর আলী জানান, ভারতের কাস্মীর থেকে চারা কিনে চাষ শুরু করেন। প্রথমবার সাত মাসের মাথায় গাছগুলোতে আঙুর ধরেছিল প্রায় ৫ থেকে ৭ মণ। তবে প্রথম ফল পাওয়ায় একটিও বিক্রি না করে এলাকার মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের ফলনেও গাছে আঙুরের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৩৩ শতাংশ জমিতে ২০০ মণের বেশি আঙুর হবে বলে আশা করছেন তিনি। এই গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।

যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী

মুনসুর আলী বলেন, আমি ইউটিউব দেখে চিন্তা করি বাহিরের দেশে আঙুর চাষ হলে আমাদের দেশের মাটিতে হবে না কেন? এখানে যা চাষ করা যায় তাই হয়। অতএব আঙুরও হবে। তবে ইউটিউব দেখে চাষ করতে আমার বেশ খরচ হয়েছে। এ বছর আরও দেড় বিঘা জমিতে নতুন করে চাষ শুরু করছি।

তিনি জানান, আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু এবং জৈব সার। এগুলো ৩ ফুট গর্ত করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্তে দেওয়া হয়। প্রতিটা গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করা যাতে গোঁড়ায় পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে এর জন্য উঁচু করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। এর ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম।

মুনসুর আলীর আঙুর ক্ষেতের কর্মচারী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা দুই-তিনজন এখানে বেতন চুক্তিতে আঙুর ক্ষেতের দেখাশোনা করি। আমাদের আগে কাজ খুঁজতে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে অনেক দূরে যাওয়া লাগতো। এখন আমরা বাড়ির কাছে কাজ করে দৈনিক ভালো মজুরি পাই, সংসারও ভালো চলছে।

প্রতিবেশী তরিকুল ইসলাম বলেন, মুনসুর ভাই যখন আঙুরের চারা রোপণ করেন তখন এলাকার অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো, পাগল বলতো। আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে সে একজন কৃষক হয়ে এতো বড় ঝুঁকি কীভাবে নিল। তবে মুনসুর ভাই এখন সফল। তার আঙুর ক্ষেতে গেলে ফিরে আসতে মন চায় না।

আলামিন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমার বাড়ি পাশের কোদালিয়া বাজারে। আমি দেখতে এসেছি, চারাও কিনে নিয়ে যাব, জমিতে লাগাবো। বর্তমান সময়ে আমাদের মতো যুবকেরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করলে তা সম্ভব।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আবু তালহা বলেন, এর আগে কেউ যশোরে এমন বাগান করতে পারেনি। লেবুতলা গ্রামের চাষি মুনসুর আলী ৩৩ শতক জমিতে আঙুরের চাষ করেছেন। ভালো ফলনও হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত মিষ্টি আঙুরের চাষ হয় না। কিন্তু মুনসুর আলী ভারত থেকে চারা সংগ্রহ করে আঙুর চাষ করেছেন। সফলও হয়েছেন। আমরা তার ক্ষেত সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।

কৃষক মুনসুর আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন। আঙুরের বাম্পার ফলন দেখে কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে তার কাছে চারা সংগ্রহ করতে আসছেন অনেকে। আঙুরের কলম চারা ২০০-৩০০ টাকা করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত