Homeডিএসই/সিএসইবিএসইসির অনুমোদন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ চালুর সম্মতি

বিএসইসির অনুমোদন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ চালুর সম্মতি

সিনিয়র রিপোর্টার : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো চালু করতে ইতোমধ্যে সিএসইকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তবে দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা না থাকায় এ বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করতে চায় সিএসই। সিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করারওসম্মতি দিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছরের মার্চের শুরুতে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ও ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মধ্যে পরামর্শ চুক্তি বিষয়ে আবেদন জানিয়ে একটি মেইল পাঠায় সিএসই।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী পরামর্শভিত্তিক পরিষেবাগুলো নিতে পারবে সিএসই। তবে, তা বাংলাদেশের আইন মেনে নিতে হবে।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনের জন্য তাদের চারজন প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দেয় বিএসইসি। তারা হলেন— বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মো. মনসুর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি।

এদিকে, এ সফরে সিএসই থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি মনোনীত করা হয়। তারা হলেন—সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান এবং উপ-ম্যানেজার ও সিএসইর প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটির সচিব মো. ফয়সাল হুদা।

এছাড়া, বাণিজ‌্য মন্ত্রণালয় থেকে দুজন প্রতিনিধিকে সফরে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন দেয়। ভারত সফরে নেতৃত্ব দেয় বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন স্থগিত করা হয়। কিন্তু, এ পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের সঙ্গে সিএসই যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সিএসই পরামর্শ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক বলেন, সিএসই স্বপ্রণোদিত হয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে, করোনার কারছে সেটা সম্ভব হয়নি। দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান জন্য ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসি  সম্মতি দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। অনেকের মতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। দেশের কমোডিটি পণ্যকে যদি স্ট্যাবল করতে হয়, তাহলে কমোডিটি এক্সেচেঞ্জের বিকল্প নেই। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই আরও বেশি সুবিধা পাবেন।

পাট, তুলা, স্বর্ণ, আলু, পেঁয়াজ, চা ইত্যাদি পণ্যের মধ্য থেকে এক বা একাধিক পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কেনাবেচা করা যায় কি না, সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে সিএসইর পক্ষ থেকে। একটি কেন্দ্রীভূত বাজারের সঙ্গে পণ্য ব্যবসা ও ভোক্তাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংগঠিত ও স্বচ্ছ বাজার সিন্ডিকেট ও দামের কারসাজি কমাতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

সিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সিএসই ইতোমধ্যে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের বিনিয়োগকারীকে পণ্য লেনদেনের সুবিধা দিতে কাজ চলছে।

তবে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করলে প্রথম পর্যায়ে নন-ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায় সিএসই। ফলে, ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি না থাকায় সাময়িকভাবে ওয়্যারহাউজ ও গোডাউন লাগছে না। পরবর্তী সময়ে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হবে। এজন্য সিএসই শিগগিরই কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কনসালট্যান্টের পরামর্শে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার আগে স্টোরেজ মেকানিজম ও ম্যানেজমেন্ট, ডেলিভারি সিস্টেম, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম, হিউম্যান রিসোর্সসহ, বাজার স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছে সিএসই। এসব বিষয়ে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ সিএসইকে পরামর্শ দিতে সম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি লেনদেন ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা করা হয়ে থাকে। কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে এ কেনাবেচা নিষ্পত্তি হবে। মূল এ লেনদেনকৃত পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ অনুযায়ী, কৃষিপণ্য, মাছ, গবাদিপশু, খনিজ ও জ্বালানি পণ্য, বনজ সম্পদসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্যই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের আওতায় কেনাবেচা করা যাবে। এসব পণ্য কেনাবেচা বা লেনদেনের জন্য যে প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে, সেটাই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত